সারা বাংলা

কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের ভুখা লংমার্চ

করোনা মহামারির সময়েও নিয়মিত কাজ করছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা। তবে মজুরি পাচ্ছেন না ১২ সপ্তাহ ধরে। খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মজুরি দিচ্ছি, দেব বলে সময়ক্ষেপণ করছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। কেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে ‘ভুখা লংমার্চ’ করেছেন ওই বাগানের শ্রমিকরা।

রোববার (১৯ এপ্রিল) উপজেলা সদর অভিমুখে ‘ভুখা লংমার্চ’ করেন কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা। তারা ১২ দফা দাবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে কালিটি চা বাগান থেকে দুই ঘণ্টা লংমার্চ করে কুলাউড়ায় পৌঁছান।

এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মজুরি পরিশোধের দাবি জানান শ্রমিকরা। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালিটি বাগানটি জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে ১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তাদেরকে দৈনিক ১০২ টাকা হিসেবে সাপ্তাহিক মজুরি দেওয়ার কথা। কিন্তু কাজ করেও তারা ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। বাগানের শ্রমিক সরদার ও কর্মকর্তাদের ১১ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে।

বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। ঘরে চাল-ডাল না থাকায় অনেককেই অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’

শ্রমিকনেতা বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘অভাব আমাদের কাছে এখন করোনাভাইরাসের চেয়ে বড় হুমকি। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা না হলে শত শত চা শ্রমিককে অনাহারে মরতে হবে।’

মজুরি বন্ধের ব্যাপারে কালিটি বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাশ বলেন, ‘কোম্পানির কাছ থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাস ধরে বেতন বন্ধ আছে।’

চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু দাশ বলেন, ‘বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। শ্রমিকদের আগের মজুরিও বকেয়া পড়ে আছে। অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচা ঘরে বাস করেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে ৭ শতাংশ টাকা ভবিষ্য তহবিলের কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিক পক্ষ থেকে ৭ শতাংশ টাকা যোগ করে শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তা-ও করছে না।’

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমেদ সলমান বলেন, ‘চা বাগানের মালিকের সাথে কথা বলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান করব। নয়তো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মৌলভীবাজার/সাইফুল্লাহ/রফিক