সারা বাংলা

গায়ে আগুন দিলেন স্বামী, চিকিৎসার ভার নিলেন ওসি

যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন পাষণ্ড স্বামী। হাত,গলা, বুক, পেটসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসার সামর্থ‌্য নেই পরিবারের তাই। ঢাকা মেডিক‌্যাল থেকে ফেরত নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়িতে। অপেক্ষা শুধু মৃত‌্যুর।

এমন সময় খবরটি জানতে পেরে দেবদূতের মতো পরিবারটির প্রতি হাত বাড়িয়ে দিলেন থানার ওসি। চিকিৎসা খরচের টাকা দিয়ে আবার ঢাকায় পাঠানো হলে দুই সন্তানের জননি ওই গৃহবধূকে।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ঘটনা। আইয়ুব নবী নামের ওই পাষণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে তার স্ত্রী শান্তা আক্তারকে (২০) আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগটি উঠেছে।

এই ঘটনায় গতকাল বুধবার (২২ এপ্রিল) রাতে গোপালপুর থানায় গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া সওদাগর পাড়ায় এই আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, শান্তা নামের অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধূর বাড়ি গোপালপুর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মোক্তার আলীর মেয়ে। প্রায় ১২ বছর আগে একই উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া সওদাগর পাড়া গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. আইয়ুব নবীর সাথে শান্তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আইয়ুব নবীকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল।

তাদের সংসারে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। বিয়ের সময় যৌতুক দেয়া হলেও গত ৩ বছর ধরে আইয়ুব শান্তাকে তার বাবার বাড়ি থেকে আরও টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।

দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় শান্তা যৌতুক এনে দিতে না পারায় শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কিছুদিন আগে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শান্তা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় তার বাবার বাড়িতে। পরে গ্রাম্য শালিসে বিষয়টি মীমাংসা করে আর নির্যাতন করবে না জানিয়ে স্ত্রীকে নিজ বাড়ি নিয়ে যান আইয়ুব।

পরে আবারও শুরু হয় নির্যাতন। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার আবারও শান্তাকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় আইয়ুব। শান্তা রাজি না হওয়ায় স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় পাষণ্ড আইয়ুব।

শান্তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে পালিয়ে যায় আইয়ুব। পরে আগুন নিভিয়ে প্রতিবেশীরা শান্তাকে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।

গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী রাইজিংবিডিকে জানান, আগুনে শান্তার দুই হাত, গলা, পেটসহ বুকের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে।

মামলার বাদী শান্তার ভাই লতিফ বলেন, ‘আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় গতকাল সকালে শান্তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসার ব্যয়ের কথা চিন্তা করে আবার এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে আসি। পরে থানার ওসি সেটি জানার পর শান্তার চিকিৎসার সব ব্যায়ভার নিজে বহন করবেন বলে জানান। তিনিই আবার শান্তাকে ঢাকা পাঠিয়েছেন। কাল রাতে থানায় মামলাও দায়ের করেছি। ওসি সাহেব চিকিৎসা খরচের টাকা দিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজন হলে পরে আবার দেবেন বলেও জানিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওই গৃহবধূর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। যে কারণে তারা আশঙ্কাজনক হওয়ার পরও শান্তাকে হাসপাতালে নিতে পারছিল না। পরে সেটি জানার পর আমি তার ভাইয়ের কাছে চিকিৎসার জন্য যাবতীয় খরচ দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় শান্তার অবস্থা ইাশঙ্কাজনক ছিল। তবে আগের চেয়ে এখন কিছুটা ভালোর দিকে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আইয়ুব পলাতক রয়েছে। যেহেতু এখন করোনার প্রকোপ চলছে, যার জন্য সবাই ঘরবন্দি থাকছে। তাই তাকে খুঁজে পাওয়াও কষ্টকর। তারপরও আশা করি দ্রুতই তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’ সিফাত/সনি