সারা বাংলা

দৌলতপুরের সাধুদের খোঁজ রাখছে না কেউ!

‘আপন ঘরের খবর নে না, অনাসে দেখতে পাবি কোন খানে সেই বারামখানা’ বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইজি তার জীবদ্দশায় মানবধর্মের কথা বলেছেন, নিজে পালন করেছেন এবং তাঁর শিষ্যদেরও একই মত ও পথ দেখিয়েছেন।

করোনায় প্রায় দুই মাস হতে চলা লকডাউনে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কর্মহীন, দিনমজুর, দরিদ্র, অস্বচ্ছল ও দুঃস্থদের মাঝে কম-বেশি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এই ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হয়নি মানবধর্মে বিশ্বাসী লালন অনুসারি মানুষগুলোকে। একবার খোঁজও নেওয়া হয়নি তাদের।

এই মানুষগুলো স্বেচ্ছায় কেউ অন্নদান করলে তা গ্রহণ করেন কিন্তু তা কখনও হাত বাড়িয়ে চেয়ে নেন না। গুরু ভক্তে বিশ্বাসী প্রকৃতিপ্রেমি নির্লোভ মানুষগুলো কখনও অন্যের অমঙ্গল কামনা করেন না। তাই না খেয়ে থাকলেও এরা কারো কাছে ত্রাণ চাইতে পারেননি।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাতেই প্রায় ২৫-৩০টি ছোট ছোট সাধুদের আশ্রম আছে। সেখানে প্রায় তিন শতাধিক সাধুর বসবাস।

দৌলতপুরের সাধু সলেমান ফকির বলেন, ‘কারো কাছে হাত পাতার মতো শিক্ষা গুরু থেকে পাইনি। ঘরে খাবার নেই, ঠিকই দিন চলে যাবে। সাধনা করেই দিন পার করে দিচ্ছি।’

সাধু সাইদুল ফকির বলেন, ‘আমরা অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর কেউ নাই। সরকারী কোনো সাহায্য সহযোগিতাও আসেনি। আমরা ফকির, বাউল, সাধুরা কি দেশের জনগণ না।’

নিরামিষভোজী এসব মানুষগুলো না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলবে না অন্নদানের কথা। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিৎ এসব সাধুদের অন্নদানে।

উপজেলার সাধুদের কোনো তালিকা বা তথ্য নেই দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে। তাই তাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘দৌলতপুর উপজেলার সাধুদের সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। সাধুরা কখনও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। যদি যোগাযোগ করে তাহলে তাদের সহায়তা করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাধুদের দেওয়া হয়েছে কি জানা নেই। তবে সাধুদের সঠিক তালিকা পেলে তাদের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ কুষ্টিয়া/সনি