সারা বাংলা

বাসে নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার এক বছর

২০১৯ সালের ৬ মে রাতে ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের পিরিজপুর রুটের বাসে বাড়ি যাচ্ছিলেন নার্স তানিয়া। কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হয়নি তার। বাসেই তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

চলন্তবাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যার আজ এক বছর পূর্ণ। অথচ চার্জশিটভূক্ত ৯ আসামির মধ্যে এখনো ২ জন অধরা। বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার না হওয়ায় হতাশ পরিবার।  বিষাদ ও শূন্যতায় ভরা মুখ নিয়ে ঘুরে ফিরছে আদালতের দোরগোড়ায়। শুধু একটাই প্রত‌্যাশা সর্বোচ্চ বিচার হবে, ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের। সে অপেক্ষায় প্রহর গুনছে তানিয়ার পরিবার।

তানিয়া ইবনে সিনা হাসপাতালের কল্যাণপুর ক্যাম্পাসে সেবিকা পদে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার মহাখালী থেকে সেদিন ‘স্বর্ণলতা' নামের বাসে বাড়ি ফিরছিলেন নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়া।কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে মেয়ের অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ বাবা মো.গিয়াসউদ্দিন। বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে আসার পর কথাও হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে আর পৌঁছতে দেয়নি জঘন্য পশুরা। কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিলপাড় গজারিয়া নামক স্থানে শেষ হয় যায় সব।

ঘটনার পরদিন ৭ মে তানিয়ার বাবা মো. গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়- বাস চালক নূরুজ্জামান নূরু, হেলপার লালন মিয়া, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম রফিক, খোকন মিয়া, বকুল মিয়া উরফে ল্যাংরা বকুল, বাস মালিক মো. আল মামুন, বোরহান এবং স্বর্ণলতা পরিবহনের এমডি পারভেজ সরকার পাভেল।

এদের মধ্যে ৩ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। গত ৮ আগস্ট ২০১৯ জবানবন্দির ভিত্তিতে মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে চার্জশিট দেয়ার পর বর্তমানে মামলাটি কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২নং আদালতে বিচারকার্যের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তানিয়ার ভাই আখতারুজ্জামান বাদল জানান, পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়ার পরও অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) সারোয়ার জাহান স্বর্ণলতা বাসের চালক, হেলপারসহ ৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভূক্ত দুই আসামিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্তও আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।

বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খলিলুর রহমান পাটুয়ারি জানান, আসামি বোরহান এবং স্বর্ণলতা পরিবহনের এমডি পারভেজ সরকার পাভেল গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বাসিন্দা। আমরা আমাদের যাবতীয় তথ্যাদি আদালতে দাখিল করেছি। পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে যাবতীয় সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।

তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খুব অসহায় ও গরীব। আমার মেয়ে চাকরি করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে ছিল। আমার মেয়ে সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ছিল। কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা তানিয়া আমাদের মাঝে নেই। মেয়েকে তো আর ফিরে পাবোনা, তবে একটাই আশা আমার মৃত‌্যুর আগে যেন মেয়ে হত‌্যার দোষীদের বিচার দেখে যেতে পারি। যারা এমন ন‌্যাক্কারজনক কাজে জড়িত আদালত যেন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়।'

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, আসামি পক্ষ রিভিউ করায় মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় স্থগিত রয়েছে।তবে বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি নন তিনি।

কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ্ আজিজুল হক জানান, গত জানুয়ারি মাসে আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিউ করলে উচ্চ আদালত মামলটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত স্থগিত করে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে কোর্ট বন্ধ থাকায় মামলাটি বিচারহীন অবস্থায় ঝুলে আছে।

এদিকে তানিয়ার পরিবারের অভিযোগ, আসামি পক্ষ মামলাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তবে তারা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শেষ করে আসামিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হবে। তাছাড়া চার্জশিটভুক্ত পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার কার্যকর হবে, এমনটাই আশা করছে তানিয়ার পরিবার ও কিশোরগঞ্জবাসী।

 

কিশোরগঞ্জ/টিপু