সারা বাংলা

কক্সবাজারে হচ্ছে সর্বাধুনিক আইসিইউ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীদের সেবায় কক্সবাজার সদরে স্থাপন করা হচ্ছে ২০ শয্যার আধুনিক ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ ও এইচডিইউ। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে ১১টি স্থানে তৈরি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ বেডের আধুনিক আইসোলেশন ইউনিট।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা সর্বাধুনিক ব্যবস্থায় চিকিৎসা পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পাশে অস্থায়ী মেডিক‌্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে প্রস্তুত হচ্ছে ১০ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার এইচডিইউ। দ্রুত গতিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে প্রস্তুত কক্ষ, বসানো হচ্ছে এসি ও কক্ষের গ্লাস। এ কাজের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অপর একটি কক্ষে রাখা হয়েছে চারটি ভেন্টিলেটর। কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ শেষ হওয়ার পরই বসানো হতে পারে আধুনিক মেডিক‌্যাল ভেন্টিলেটর।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, আধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতে কক্সবাজারের মানুষকে ঢাকা যেতে হয়। কিন্তু কক্সবাজার থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেক। কোনো ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় না।

যাদের সার্মথ্য আছে তারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যারা অসহায়, তাদের পক্ষে এটি সম্ভব হয়ে উঠে না। এর প্রেক্ষিতে বিশেষ করে করোনা প্রার্দুভাব আসার আগ থেকে ইউএনএইচসিআরকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে। তারপর থেকে ইউএনএইচসিআর এটি নিয়ে কাজ করে। এরপর গুরুত্ব দিয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার এইচডিইউ এবং ভেন্টিলেটর সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

‘আশা করি, করোনা আক্রান্ত ছাড়াও জটিল যে কোনো রোগীর আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে’ বলেন তিনি।

এদিকে জেলা সদর হাসপাতালের সুপারেন্ডেন্ট ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, ১০ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার এইচডিইউ প্রস্তুতের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কক্ষগুলোতে এসি বসানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে চারটি ভেন্টিলেটর পৌঁছে গেছে। বাকি ছয়টি ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেনগুলো চলে এলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা হবে। আশা করি, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আইসিইউ সুবিধা পাবেন কক্সবাজারবাসী।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি। তার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাই স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফের ১১টি স্থানে দ্রুত গতিতে এক হাজার ৯০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট তৈরির কাজও চলছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীদের জন্য ১৬৮টি আইসোলেসন বেড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ৬৩টি বেড স্ট্যান্ড বাই আছে। এছাড়া আইসোলেশন সেন্টারের জন্য ১৯০০টি বেডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার মাঝে ১২৪৩টি বেড চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তুত থাকবে। বাকি বেড মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রস্তুত হবে। সর্বমোট ১১টি আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণাধীন রয়েছে ।

তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র কোভিড-১৯ রোগী বহন করার জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সেবা প্রদানের জন্য ২৮০ জন ডাক্তার ও নার্সকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকি অন্যান্যদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর মেডিক‌্যাল কোর, কক্সবাজার সদর হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ডাক্তার, নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা ১১৬টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু আছে, যাতে ২৩২ জন ডাক্তার ও ২০৭৩ জন সেবা কর্মী দ্বায়িত্বরত আছেন।

আইসিইউ, এইচডিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট তৈরিতে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

 

কক্সবাজার/সনি