সারা বাংলা

ফিরেছে ঘুড়ি ওড়ানো বিকেল

‘আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি/তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি’। কবি সুফিয়া কামালের ‘আজিকার শিশু’ কবিতার এ দুই পঙ্‌ক্তি মনে করিয়ে দেয় শৈশবে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই আনন্দময় স্মৃতি। এখন করোনার কারণে চলা লকডাউনে অখণ্ড অবসর রাঙাতে ফিরে এসেছে সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকেল।

স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা যেমন ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনই অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ থাকায় বড়রাও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন বিকেল হলেই খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ ভবনের ছাদ এবং মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। অনেকেই আবার ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকে ছবি আপলোড করছেন।

শীতের শেষে বসন্তের আগমনে দখিনা মলয় হিল্লোলে প্রকৃতি যখন জেগে উঠত, তখন গ্রামের খোলা মাঠে চলত ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রত্যেক কিশোরের হাতে থাকত লাটাই, আকাশে উড়ত রঙিন ঘুড়ি। বিচিত্র নাম ছিল এসব ঘুড়ির, যেমন: চিল ঘুড়ি, বেত ঘুড়ি, ডাক ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি, মাছ ঘুড়ি, মানুষ ঘুড়ি ও তারা ঘুড়ি।

ঘুড়ি বানানো হতো সিমেন্টের বস্তার কাগজ, লেখার জন্য ব্যবহৃত সাদা কাগজ অথবা রঙিন কাগজ দিয়ে। বাঁশপাতা কাগজ নামে এক ধরনের কাগজ তৈরি হতো নতুন বইয়ের মলাট লাগানো ও ঘুড়ি বানানোর জন্য। সারের বস্তা থেকে এক ধরনের পাতলা সুতা তুলে কিংবা বেত ও বাঁশ থেকে বিশেষভাবে তৈরি পাতলা চ্যাটা একটি ছড়ের সঙ্গে বিশেষভাবে বেঁধে ঘুড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করার পর আকাশে উড়িয়ে দিলে ঘুড়ি থেকে সুরেলা শব্দ শোনা যেত। এই ঘুড়িকে ডাক ঘুড়ি বলা হতো।\

নগরীর পশ্চিম টুটপাড়ার চাকরিজীবী মোল্লা মারুফ রশীদ ও দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রফিউল ইসলাম টুটুল বাড়ির ছাদে নিজেদের ঘুড়ি উড়ানোর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। স্কুল শিক্ষার্থী তামিম শেখ ও আসিফ ফরাজীসহ চার শিশু-কিশোরকে দেখা যায় ভরদুপুরে স্কুলের মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে। তারা নিজেরা বিশেষ পদ্ধতিতে একটি ঘুড়ি তৈরি করেছে, নাম দিয়েছে ব্যাত চিল্লে (বেতঘুড়ি)। রাতের বেলা ওড়ানোর জন্য এর সঙ্গে আবার বৈদ্যুতিক তার ও বাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে আলো জ্বলে। দেখতে বেশ সুন্দর।

জানতে চাইলে এই দুরন্ত শিশু-কিশোররা বলে, ‘স্কুল বন্ধ। তাই নিজেরা ঘুড়ি বানিয়ে উড়াচ্ছি।’

গ্রামের কিশোররা এভাবে নিজেরাই ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়ে থাকে। তবে শহরের শিশু-কিশোররা বেশিরভাগই ঘুড়ি কিনে উড়িয়ে থাকে। এ কারণে শহরের অধিকাংশ মুদি দোকানেই এখন মিলছে ঘুড়ি। সাধারণ কাগজের তৈরি প্রতিটি ঘুড়ির মূল্য ৫ টাকা হলেও বিশেষভাবে তৈরি চিল ঘুড়ি অথবা অন্য ডিজাইনের ঘুড়ির দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

খুলনা নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া বড় খালপাড় এলাকার মুদি দোকানি মো. আসাদুজ্জামান জানান, দোকানে এখন প্রচুর পরিমাণে ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে। তাই বিকেলে একটু আনন্দ পেতেই তারা ঘুড়ি ওড়ানোতে মেতে উঠছে। খুলনা/নূরুজ্জামান/রফিক