সারা বাংলা

গলাচিপার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বুধবার ভোর রাত থেকে থেমে থেমে দমকা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। গলাচিপার দুইটি গ্রামের রিং বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে গোলখালীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল উপজেলা প্রশাসন সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও গলাচিপা পৌর এলাকাসহ ওয়াবদা বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়ে অন্তত আট হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পৌর এলাকার ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়ি বাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন পৌর ও উপজেলা প্রশাসন।

জানাগেছে, গলাচিপার গোলখালী ইউনিয়নের দুই এলাকার রিং বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়েছে। অপরদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে উপজেলার গ্রামর্দ্দন গ্রামে এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ দিয়ে প্লাবন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের কালিশুরি গ্রামের হাতেম তালুকদারের বাড়ির কাছে আক্কেল মোহনের খালের পাশে ওয়াবদা বেড়িবাঁধের স্লুইসের নির্মাণ কাজ চলছে। স্লুইস নির্মাণের জন্য বেড়িবাঁধ কেটে রিং বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়েছে, যা আজ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে ভেঙ্গে গিয়ে গ্রামটি প্লাবিত হয়েছে। পরে এলাকাবাসী বাধটি তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করেছেন।

গোলখালী পূর্ব গোলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল, ‘গোলখালীর আক্কেল মোহনের খাল ও তালুকদার বাড়ির পাশে ওয়াবদা বেড়ি বাঁধে চায়না কোম্পানি স্লুইস নির্মাণ করছেন। বেড়ি বাঁধ কেটে বেড়ি বাঁধ দেওয়া আছে। কিন্তু আজ জোয়ারের পাানির চাপে বাঁধ দুটি ছুটে যায়। এলাকার লোকজন দেখতে পেয়ে বাঁধটি মেরামত করেছে কিন্তু পানি আর তিন ফুট বৃদ্ধি পেলে গোলখালীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

অপরদিকে গলাচিপার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের গ্রামর্দ্দন এলাকায় বেড়ি বাঁধ ডুবে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় ওই গ্রামের যুবক, বৃদ্ধ মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি দিয়ে বাঁধটি উঁচু করে মেরামত করে দিয়েছেন। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এলাকাবাসী স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁধটি মেরাতম করেছেন। এসময় এলাকাবাসীর সাথে কাজে সহযোগিতা করেন গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন, সিপিপির উপজেলা টিম লিডার আবু হেনা সোয়েব ও শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির ও সমাজকর্মী জিয়া।

রতনদীতালতলী ইউনিয়নের সিপিপির ইউনিয়ন টিম লিডার মোস্তাফিজুর রহমান শাকিল বলেন, সকালে জোয়ারের পানি বেড়ি বাঁধ ছুই ছুই দেখেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এর পরেই আমরা গ্রামবাসী মিলে স্বেচ্ছা শ্রমে বেড়ি বাঁধটি আমরা মাটি দিয়ে উঁচু করে দিয়েছি। তবে এ বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে অন্তত তিন ইউনিয়নের জান মালের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়াও উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের তেতুলতলা এলাকার রিং বেড়ি বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ।’

এ বিষয় গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবান কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গোলখালী ইউনিয়নে নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। কিছু কিছু জায়গায় স্লুইসের কাজ চলায় ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে দুই পয়েন্ট দিয়ে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে ওই এলাকা থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।’

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। গোলখালীর তালুকদার বাড়ি এলাকার স্লুইসে কাঠ দিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছি। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে-সাধ্য মতো লাঘবের চেষ্টা করছি। আপাতত জান মাল রক্ষার জন্য কাজ চলছে। গোলখালীর ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা থেকে মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়া হচ্ছে।’

 

গলাচিপা (পটুয়াখালী)/ সাকিব হাসান/সাজেদ