সারা বাংলা

আনিছ যখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে

আনিছ বাবা-মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। প্রতিবন্ধী বোনের শেষ ভরসা। করোনার দুর্যোগে ছোট্ট সংসার যখন বিপর্যস্ত, জীবন-নৌকা টালমাটাল, তখন আনিছ নিজেই চাইছেন সেই নৌকার হাল ধরতে। লক্ষ্য একটাই- চাকরি। এজন্য শিক্ষাগত যোগ্যতাও তার আছে। বুকে আছে অদম্য মনোবল। দু’চোখে আছে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। নেই শুধু দু’পায়ে বল। আনিছ শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি একটা চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

কিশোরগঞ্জ সদরের শ্রীমন্তপুর গ্রামে আনিছের বাড়ি। বাবা-মা, ছোট বোন আমেনা খাতুনকে নিয়ে তার পরিবার। আমেনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। পড়ছেন কিশোরগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজে। ঘরে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা সিদ্দিক হোসাইন। তিনি পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। কিন্তু করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার উপার্জন নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। ফলে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারী কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিস বাবার সংসার সামলানোর যুদ্ধটা ছোটবেলা থেকেই দেখছেন। কিন্তু এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আনিছ মনে করেন, যে মনোবল নিয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃপাদৃষ্টি পেলেই তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বরাবর গত ২৫ মার্চ লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু দেশের করোনা পরিস্থিতি তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘দু’পায়ে হেঁটে চলার ক্ষমতা আমার নেই। কখনও হুইল চেয়ার, কখনও ক্রাচে ভর দিয়ে আমাকে চলতে হয়। তবুও সাহস হারাইনি। সাধ্যমতো লেখাপড়া করেছি। কম্পিউটার কোর্সও করা আছে। অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব নিজেকে চাকরির জন্য তৈরি করেছি। কিন্তু তারপরও একটা চাকরি পাচ্ছি না।’’

আনিছ শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব, অসহায় মানুষের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য তিনি সদয়। এ কারণে আনিছ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতপ্রার্থী। তিনি তার দুরবস্থার কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চান। প্রতিবন্ধী কোটায় হলেও চান একটা চাকরি। 

সিদ্দিক হোসাইনও বললেন একই কথা। ছেলেমেয়ে দু’জনেরই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ জানিয়ে সিদ্দিক বলেন, ‘বর্তমানে সংসারের যে পরিস্থিতি তাতে প্রতিবন্ধী সন্তানদের লালন-পালন প্রায় অসম্ভব। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। এখন ছেলেটার একটা চাকরি হলে বেঁচে যেতাম। হাঁটাচলা করতে না-পারার কারণে কেউ তাকে কাজ দেয় না।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, আনিছ শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে সুস্থ মানুষও ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়। আনিছ নেয়নি। তার ইচ্ছে অসহায় বাবা-মার পাশে দাঁড়ানো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী আনিছের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে তার পরিবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিশোরগঞ্জ/তারা