সারা বাংলা

‘জোয়ারের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি, কেউ খবর নেচ্ছে না’

‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বসত ঘর উড়ায় নিয়ে গেছে। ধান, চাল, থালা, বাসনসহ ঘরের মালামাল নদীতে ভাইসে গেছে। এখনো জোয়ারের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে মাচার উপর খোলা জায়গায় বাস করতিছি। তাও কেউ খবর নেচ্ছে না।’

এভাবেই আপেক্ষ করছিলেন সুপার সাইক্লোন আম্ফানে বাড়িঘর হারানো সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারী গ্রামের পুলিনকৃষ্ণ সরদার (৬৫)। তার মত একই এলাকার রনজিৎ সরদার, সত্যজিৎ সরদার, উত্তরা মণ্ডল, রতনা মণ্ডলসহ আরও অনেকে আম্ফানে বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রবল আঘাতে সুন্দরবন লাগোয়া ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাইরে পশুর নদীর তীরে বসবাসরত দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারী, রেখামারী ও বানিশান্তা পতিতা পল্লীর অধিকাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পশুর নদীতে ভেসে গেছে অনেকের মালামাল ও ঘেরের মাছ। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব পরিবার।

ঢাংমারী এলাকার বাসিন্দাদের মতো কালাবগী এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে অবস্থানরত ঝুলন্তপাড়ায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

ঢাংমারী এলাকার বাসিন্দা বিনয় কৃষ্ণ সরদার ও স্বপন মণ্ডল জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া পশুর নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে অনেকের ঘর ও বাড়ির মালামাল ভেসে গেছে। ঝড়ে ঢাংমারী এলাকায় ৮৫টি, রেখামারী এলাকার ৮৮টি, ও বানিশান্তা পতিতা পল্লীর ৯০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধবস্ত হয়েছে। এছাড়া কাঁচা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত এসব লোকজন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বানিশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাস্তার বাইরে ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পতিতা পল্লী, ঢাংমারী, রেখামারী অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে ত্রাণ বিতরণের জন্য তালিকা করা হচ্ছে।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল ওয়াদুদ জানান, সুপার সাইক্লোন আম্ফানে গোটা উপজেলার প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ৯ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা ৩০০ ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে।

তিনি বলেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আনোয়ান হোসেন হাওলাদার এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বটবুনিয়াসহ বাজারসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ ও ঢেউটিন বিতরণ করেন। খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাজেদ