সারা বাংলা

আপন-পর চিনিয়ে দিচ্ছে করোনা

 করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে সেটা অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস‌্যরাও বুঝতে পারছেন না। এতে করে করোনা রোগী বা উপসর্গ আছে এমন কেউ পরিবারের একান্ত আপনজনদের কাছ থেকে নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক কিশোরের শনিবার (৩০ মে) সংকটাপন্ন অবস্থা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ওই কিশোরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে ওই কিশোরের সাথে কে যাবে তা নিয়ে বিপত্তি বাধে। পরিবারের কেউ তার সাথে যেতে রাজি নন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠাতে ওই কিশোরের অভিভাবকদের আনতে তাদের বাড়িতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। তারপরও ওই কিশোরের স্বজনদের গাছাড়া ভাব ছিল। স্বজনদের কেউই যেন চাচ্ছিলেন না কিশোরের সংস্পর্শে যেতে।

এক পর্যায়ে চিকিৎসকদের চাপেই এগিয়ে আসেন তার বাবা। এরপর বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংকটাপন্ন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় ওই কিশোরকে।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওই কিশোরের পরিবারের এমন দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে অবাক হয়ে যান বরগুনার চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মেহেদী হাসান ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘‘ডাক্তারি জীবনে এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই প্রথম। তবে তার চেয়েও আজ যে করুণ অভিজ্ঞতার শিকার হলাম তা আজীবন মনে রাখতে বাধ্য। যে বাবাকে আমি হাসিমুখে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে দেখেছি, সেই একই বাবাকে আজ হাসপাতালে ছেলের কোভিড সন্দেহে পিপিই থাকার পরেও যে চোর চোর খেলার দৃশ্যে অবতরণ হতে দেখলাম তা ভোলার নয়।

কোভিড সত্যিই আমাদের চোখ খুলে দিচ্ছে। কোভিড চিনিয়ে দিচ্ছে কে আপন, কে পর।”

 

রুদ্র রুহান/সনি