সারা বাংলা

সৈকতে প্লাস্টিক বর্জ্য আসার কারণ অজানা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক, পলিথিন, মদের বোতল, ছেঁড়া জাল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য ও জলজ প্রাণি ভেসে আসার সঠিক কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি।

সেই সাথে সোমবার (১৩ জুলাই) ১৫টি আধা-মরা ও পাঁচটি মৃত কাছিম লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের সৈকতে ভেসে এসেছে। সি সেইভ লাইফ গার্ডের উদ্ধারকর্মী মোহাম্মদ ওসমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসমান বলেন, ‘এগুলোর মধ্যে আহতাবস্থায় থাকা সামুদ্রিক কাছিমগুলো লাইফ গার্ড কর্মীরা উদ্ধার করে সাগরে অবমুক্ত করলেও মৃতগুলো বালিয়াড়িতে পড়ে আছে।’

এছাড়া সোমবার বিকাল পর্যন্ত সৈকতের বিশাল একটি অংশজুড়ে ভেসে আসা বর্জ্য ও মৃত জলজ প্রাণিগুলো বালিয়াড়িতে পড়ে থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের এগুলো অপসারণে কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি বলে জানান লাইফ গার্ডের এ উদ্ধারকর্মী।

বর্জ্য ও জলজ প্রাণি ভেসে আসার কারণ উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া উচ্চতর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে পড়ে থাকা বর্জ্য ও মৃত প্রাণির দুর্গন্ধে সৈকতের সৌন্দর্য্য আর পরিবেশ দূষণের শিকার হলেও সোমবার বিকাল পর্যন্ত এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

সোমবার (১৩ জুলাই) বিকালে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, শনিবার (১১ জুলাই) রাত থেকে সমুদ্র সৈকতের একটি অংশজুড়ে নানা ধরনের বর্জ্য ও জলজ প্রাণি ভেসে আসার খবরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। দলটির সদস্যরা সৈকতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, কিছুসংখ্যক মৃত ও আহত জলজ প্রাণি পড়ে থাকতে দেখেন।

তিনি বলেন, ‘‘রোববার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য রাখা হয়েছে, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য সম্পদ ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে উচ্চতর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হবে। তবে সৈকতজুড়ে পড়ে থাকা বর্জ্য ও মৃত জলজ প্রাণিগুলো সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

সমুদ্র বিশেষজ্ঞ মুদাব্বির রহমান খন্দকার বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট হতে হিমছড়ি পর্যন্ত উপকূলে স্রোতের সাথে বর্জ্য ভেসে আসছে তা জীব বৈচিত্র‌্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে; সে কারণে এসব বর্জ্য প্রতিবেশি দেশসমূহের কোনো জাহাজ থেকে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইয়েন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগের ডিন প্রফেসর রাশেদ-উন নবী বলেন, ‘ঘটনা অনুসন্ধানের পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

এদিকে বর্জ্যের সঙ্গে ভেসে আসা জলজ প্রাণিগুলোর মৃত্যুর কারণ হিসেবে এ সমুদ্র বিজ্ঞানী বলেন, ‘মাছ ধরার ছেঁড়া জালে আটকা পড়েই মূলত সামুদ্রিক কাছিমগুলোর মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত জলজ প্রাণিগুলোর ময়নাতদন্তের পরই প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানানো সম্ভব।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হুদার মুঠোফোনে গত দুদিন ধরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা কো হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার/সনি