করোনার ঈদে সারাদেশের মতো দিনাজপুরের হিলির দর্জির দোকানে নেই ব্যস্ততা। নতুন কাপড় বানানোর জন্য তেমন কেউ আসছেন না। সেলাই কর্মী ও কারিগর থেকে শুরু করে দোকান মালিকরা ঈদের প্রস্তুতির চেয়ে সংসার চালানো নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন।
দিনে দুই থেকে তিনটি কাপড়ের ওর্ডার পাচ্ছেন কারিগররা। এতে করে সংসার চলছে না তাদের। হতাশায় ভুগছেন দর্জিরা।
হিলির বিভিন্ন টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দোকানে আগের মতো পা চালিত সেলাই মেশিন দিয়ে আর সেলাইয়ের কাজ হয় না। এখন প্রতিটি টেইলার্সে বিদ্যুৎ চালিত জেক পাওয়ার মেশিন দিয়ে কারিগররা সেলাই কাজ করা হয়। বাজারে বা টেইলার্সের দোকানে কোন ক্রেতা চোখে পড়ছে না। প্রতিটি টেইলার্সে চার থেকে পাঁচজন কারিগরের জন্য জেক পাওয়ার মেশিন আছে। কিন্তু কারিগর নেই, কারণ হাতে তাদের কাজ নেই। দিনে দুই থেকে তিনটা করে সেলাইয়ের কাজ আসছে। একটি থ্রি পিস সেলাই করলে মজুরি ১৫০ টাকা আর সেখান থেকে টেইলার্স মালিক তাদের দেয় ৭০ টাকা। সার্ট সেলাই ২০০ টাকা, কারিগররা পায় ১০০ টাকা, প্যান্ট সেলাই ২৫০ টাকা, তা থেকে পায় ১৩০ টাকা, পাঞ্জাবি সেলাই ২৫০ টাকা, কারিগর তা থেকে পায় ১৩০ টাকা। প্রতি ঈদের মৌসুমে এক মাস আগে থেকে কাপড় তৈরি ওর্ডার পেয়ে থাকে এবং ঈদের ১০ দিন আগে তারা ওর্ডার বন্ধ করে দেন। এবার লোকজনই নেই।
হিলির সানমুন টেইলার্সের কারিগর শামীম আহম্মেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হাতে কোন কাজ নেই ভাই। সকাল থেকে একটা থ্রি পিসের ওর্ডার পেয়েছি। কোন ঈদে এই রকম হয়নি। সারা দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা উপার্জন হচ্ছে। এই স্বল্প উপার্জন দিয়ে সংসার চালাবো কী করে?
হিলি চুড়িপট্টি মোড়ের লেডিস টেইলার্সের সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, হাতপা ‘গুটিয়ে বসে আছি ভাই। ঈদের কোন কাপড়ের ওর্ডার নাই। ৮ থেকে ১০ টা কাপড়ের ওর্ডার আছে, তাও আবার এক থেকে দেড় মাস আগের। যাদের কাপড় তারাও কেউ কাপড় নিতে আসছে না। যারা আসছে, তারা ১৫০ টাকার সেলাই খরচ দিচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১২০ টাকা। মানুষের অভাব দেখে অনেকের মজুরি না নিয়ে কাপড় দিয়ে দিচ্ছি।’
হিলির সানমুন টেইলার্সের মালিক রহমত আলী জানান, আমার টেইলার্সে পাঁচজন কারিগরের জন্য পাঁচটি জেক মেশিন আছে। কাজের কোন ওর্ডার নেই। দিনে কয়েকটি কাপড়ের ওর্ডার আসছে, এতে করে কারিগর বা আমার কোন চাহিদা পুরণ হচ্ছে না। করোনার কারণে দুই থেকে তিন মাস টেইলার্স বন্ধ ছিলো। ভাবলাম, দোকান খুলতে পারবো এবং সামনে ঈদ, অনেক কাজ হবে। কিন্তু সারাদিন দোকান খুলে আছি, কাপড় সেলাইয়ের জন্য কেউ আসছে না। হিলি (দিনাজপুর)/মোসলেম/সাজেদ