সারা বাংলা

দুর্বিষহ দিন কাটছে কুড়িগ্রামের বানভাসিদের

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছে বন্যা শত শত মানুষ। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানের বানভাসিদের।

ক্রমান্বয়ে আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি। দুর্ভোগ বেড়েছে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষদের।

প্রায় এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এতে বেড়েই চলেছে জেলার ৩ শতাধিক চরাঞ্চলের ৪ লাখ মানুষের দুর্ভোগ। 

চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের কর্মজীবি মানুষেরা। একদিকে বন্যায় কোন কাজ জোটাতে পারছেন না, অন্যদিকে ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের বন্যা দুর্গত মানুষজন সরকারি-বেসরকারি খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু কোথাও মিলছে না প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা। উভয় সংকটে পড়া এ মানুষগুলো নিজ ঘর-বাড়িতে পানির মধ্যেই নৌকা, কলা গাছের ভেলা ও ঘরের মাঁচান চালের সাথে ঠেকিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। 

দীর্ঘদিন পানির মধ্যে বসবাস করায় বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে। অন্যদিকে দিনে দিনে তীব্র হয়ে উঠছে গো-খাদ্যের সংকট। 

সরকারিভাবে ত্রাণ দেয়া হলেও বন্যাদুর্গতদের ৬০ ভাগের ভাগ্যে জুটছে না তা। চোখে পড়ছে না কোন বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতাও।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শিশু ১৬ জন। জেলায় বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবায় ৮৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতুলির চরের মুসা মিয়া বলেন, বন্যা এতো দীর্ঘ হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। পানি সামান্য কমার পরও আবারো বৃদ্ধি পায়। কাজকর্ম নেই। ঘরে খাবার নেই। বউ, বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কোন ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ না পেলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫শ ২৫ পরিবারকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল দেয়া হবে। এতে চরাঞ্চলের কোন হতদরিদ্র পরিবার বাদ পড়বে না। 

এর আগে বন্যার্তদের মাঝে ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

বাদশাহ্ সৈকত/টিপু