সারা বাংলা

‘দীর্ঘ ২০ বছরের জেলে জীবনে এত বড় ইলিশ দেখিনি’

‘সাগরে ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ করে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে সাগরে মাছ শিকারে যাই। মাত্র দু’রাত সাগরে ছিলাম।

এই দু’রাতে সাগরে জাল ফেলতেই বড় বড় ইলিশ। যা দীর্ঘ ২০ বছরের জেলে জীবনে দেখিনি।

একেকটা ইলিশ দেড় কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের। ৪ হাজারের বেশি ইলিশ ধরার পর ট্রলার ভর্তি হয়ে যায়। তাই দ্রুত কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রির জন্য চলে আসি,’ এভাবে এফবি নিশান ট্রলারের জেলে মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ তার অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন।

শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে তিনি কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বিক্রি করতে এসে তিনি এই কথাগুলো বলছিলেন।

শুধু সেলিম উল্লাহ নন, একই অবস্থা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটি ঘাটে ইলিশ মাছ বিক্রি করতে আসা জেলে রহিম, সিকদার ও ইলিয়াছের।

শনিবার সরজমিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটিঘাটে দেখা যায়, সরকারি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ করে গত দু’দিন আগে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। কিন্তু মাত্র দু’দিনের মাথায় ফিরছে একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার। সব ট্রলারে রয়েছে হাজার হাজার ইলিশ। যা হাসিমুখে ঝুড়িতে গুণে গুণে ভরছেন জেলেরা। আবার অনেকে এসব ইলিশ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে নামাতে ব্যস্ত।

এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি লিয়াকত আলী বলেন, ‘সাগরে ৬৫ দিন সরকারি বন্ধের সুফল আমরা পাচ্ছি। মাত্র দুই দিনের মাথায় ট্রলার ভর্তি বড় বড় ইলিশ নিয়ে এখন উপকূলে ফিরেছি। এক’শ ইলিশ ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব। খুবই খুশি লাগছে।’

আরেক জেলে জব্বর বলেন, ‘অনেক বড় বড় ইলিশ পেয়েছি সাগরে। এখন মনে খুব আনন্দ। করোনা ও ৬৫ দিনের বন্ধের কারণে আমরা খুব করুণ অবস্থায় ছিলাম। এখন বড় বড় ইলিশ দেখে সব দুঃখ কষ্ট দূর হচ্ছে। ইনশাল্লাহ সামনে আরও বেশি ইলিশ আমরা সাগরে পাব।’

এদিকে, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুন সয়লাব ইলিশে। যা বেচা-কেনাতে ব্যস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকেই এসব মাছ কিনে দ্রুত সরবরাহ করছে সারাদেশে।

মৎস্য ব্যবসায়ী হারুন বলেন, ‘কক্সবাজারে এখন অনেক ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। একেকটির আকারও অনেক বড় বড়। যার কারণে ভাল দামও পাওয়া যাচ্ছে। এখন ব্যবসা করতেও সুবিধা হচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী ছুরুত আলম বলেন, ‘গত কয়েক মাস খুব কষ্টে দিন কেটেছে। কিন্তু এখন মাছ পাওয়ায় আমরা খুবই খুশি। এখন ব্যবসা করে ভাল করে সংসার চালাতে পারবো। কারণ বড় বড় ইলিশ পাওয়াতে ভাল দামও পাওয়া যাচ্ছে। তাই দ্রুত মাছগুলো ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

এদিকে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। প্রবেশের মুখে স্বাস্থ্য বিধি, সামাজিক দূরত্ব ও মুখে মাস্ক পড়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও জেলেদের সচেতন করছেন কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে শত শত ট্রলার কক্সবাজার উপকূল থেকে সাগরে মাছ শিকার যায়। মনে হচ্ছে, ৬৫ দিনের বন্ধ এখন সুফল বয়ে এনেছে। কারণ দু’দিনের মাথায় জেলেরা সাগর থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে ফিরছে। গত দু’দিনে প্রায় ১০ টনের অধিক ইলিশ কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অবতরণ হয়েছে। যা আকারেও ছিল অনেক বড় বড়। এতেই বুঝা যায়, সাগরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন জেলেরা।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে মাছ ধরার ছোট-বড় ট্রলার রয়েছে ৫ হাজারের অধিক। আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

 

কক্সবাজার/বুলাকী