সারা বাংলা

মেহেরপুরে টিকে আছে শুধু ‘প্রতিভা’ সিনেমা হল

দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় মেহেরপুরে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। তিন উপজেলার ছয়টির মধ্যে টিকে আছে শুধু ‘প্রতিভা’ সিনেমা হল।

মেহেরপুর জেলা শহরে দেশ স্বাধীনের পর স্থাপিত সিনেমা হলটির শুরুতে নাম ছিলো ‘প্রতিভা’। ১৯৯০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘চন্দ্রিমা’। আর কয়েক বছর আগে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটি ভেঙে চার তলার কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। এটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলা মিলে তৈরি করা হয় ‘মেহেরপুর হল’ নামে সিনে কমপ্লেক্স। একসঙ্গে ৪০০ দর্শক সেখানে সিনেমা দেখতে পারে।

গত দুই যুগে জেলায় নতুন সিনেমা হল নির্মাণ হয়নি। বরং এই সময়ে পাঁচটি বন্ধ হয়েছে।

বন্ধ হয়ে গেছে জেলা শহরের বড় বাজারের ‘নীলমনি’, কলেজ রোডের ‘প্রান্তিক’; গাংনী উপজেলার ‘ডায়মন্ড’, ‘রানা’ এবং মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জের ‘সোনালী’ সিনেমা হল।

‘প্রতিভা’ সিনেমা হলের সাবেক তত্বাবধায়ক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার পেছনে মানহীন সিনেমাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যুগের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি করা দরকার ছিলো।

মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি মফিজুর রহমান মফিজ বলেন, সর্বশেষ নব্বই দশকের প্রথম দিকে তিনি হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন। এরপর আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সাহস হয়নি। 

তিনি বলেন, এখনকায় সিনেমায় বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষার কিছু থাকে না। তাছাড়া আগের দিনের সামাজিক সিনেমায় প্রেম-ভালোবাসা ছিলো; কিন্তু অশ্লীলতা ছিলো না। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিনেমা দেখা যায় না।

‘মেহেরপুর হল’ সিনে কমপ্লেক্সের ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, এই হলে প্রতিদিন তিনটি শোতে গড়ে দুইশত দর্শক পাওয়া যায়। ১২ জন শ্রমিকের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে লাভ তেমন থাকে না। দেশে লকডাউন শুরুর পর হলও বন্ধ। এখন সেই শ্রমিকরাও বেকার।

‘মেহেরপুর হলে’ মাঝে-মধ্যে সিনেমা দেখতে যান মাসুদ রানা। তিনি জানান, আগে পরিবারের সবাই দলবেঁধে ‘প্রতিভা’ হলে সিনেমা দেখতে যেতেন। ভালো সিনেমা এলে ‘নীলমনি’ ও ‘প্রান্তিক’ সিনেমা হলেও যেতেন। এখন আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান না। তিনি মাঝে-মধ্যে যান।

হলে গিয়ে নিয়মিত সিনেমা দেখেন রিকশাচালক খাইরুল ইসলাম। তিনি জানান, সারা দিনের পরি্শ্রমের পর হলে যান বিনোদনের জন্য। কোন ধরনের সিনেমা তার পছন্দ, এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের পারিবারিক গল্পের সামাজিক সিনেমা দেখতে একঘেয়েমি লাগে। তার পছন্দ অ্যাকশনধর্মী নাচ-গানের সিনেমা।

সিনেমার প্রয়োজনা সংস্থা জাজ মাল্টি মিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেন, সময়ের বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। এখন বিশাল জায়গা নিয়ে সিনেমা হল করে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব না। ফলে সিনেমা হল ভেঙে মাল্টি কমপ্লেক্স হচ্ছে। তবে মালিকপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে কমপ্লেক্স ভবনে ছোট ছোট সিনেমা হল থাকতে পারে।

তিনি বলেন, সামাজিক বিনোদনের জায়গাগুলো সংকুচিত করে ফেললে সমাজ অস্থির হয়ে যাবে। পরবর্তী প্রজন্মের চিন্তার জায়গাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যাবে।

চলচ্চিত্রে এই বিনিয়োগকারী বলেন, হলের সঙ্কটের কারণে বেশি সিনেমা প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। দর্শককে হলমুখী করতে হলে সরকারের সহযোগিতা লাগবে। আর দর্শক ছাড়া সিনেমা বাঁচবে না।

 

ঢাকা/বকুল