সারা বাংলা

‘এই ঈদের আনন্দ আমাগো না’

‘এই ঈদের আনন্দ আমাগো না। বাইচ্চা থাকলে পরে ঈদ করমু।’ কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বন্দরখোলা গ্রামের আয়ুব আলী মাদবর।

আয়ুব আলী মাদবরের ঘরবাড়ি জমি জিরাত সবই ছিলো। কিন্তু এক নিমিষেই সব শেষ পদ্মার ভাঙনে। এখন নিঃস্ব। অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় চলতে হয় তার। শুধু আয়ুব আলী নয়, এই বন্যা আর নদী ভাঙনের কারণে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে অনেকেই।

মাদারীপুরের রাজৈর, সদর, কালকিনি ও শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বন্যা কবলিত এলাকায় এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সরেজমিন জানা গেছে, গত দুই দিন ধরে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় মাদারীপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় ও নদী ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা দুর্গত মাদারীপুরের চারটি উপজেলায়। সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছে তারাও ঘরে ফিরতে পারছে না। জেলায় নদী ভাঙন ও বন্যায় ভেসে গেছে সাত শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি। এছাড়াও বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

এ অবস্থায় কোরবানীর ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা চরাঞ্চলের ও নদী ভাঙন এলাকার মানুষের। মাদারীপুরের বন্যা ও ভাঙন কবলিত ৩৪টি ইউনিয়নে বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের দিনমজুর জাফর ঘরামী বলেন, ‘আমরা দিনমজুরের কাজ করি। দিন এনে দিন খাই। করোনার জন্য কাজ ছিল না। তার ওপর বন্যা, একেবারের বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই। সংসারে ১৩ জন। সবাইকে নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি। এ অবস্থায় কীভাবে ঈদের কথা ভাবতে পারি?’

অন্যদিকে কালিকিনি উপজেলার আলীনগর এলাকার চরহোগলপাতিয়া গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ নদীর ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।

আগ্রাসী হয়ে ওঠা নদীপাড়ের পাঁচ গ্রামের মানুষ ভয়-আতঙ্কে কাটাচ্ছেন। অনেকের সাথেই কথা হয়েছে। তাদের সবারই একই কথা-‘আগে বাড়ি ঘর বাঁচানোর চেষ্টা, তারপর ঈদ। বেঁচে থাকলে কত ঈদ আইবো!’

চরহোগলপাতিয়া গ্রামের সালমা বেগম বলেন, ‘৩/৪ মাস ধরে আমার স্বামীর কোনো কাজ নেই। তাছাড়া বাড়ি ঘর ভাঙার উপক্রম। ঈদ নিয়ে এবার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’