সারা বাংলা

কষ্টে-শিষ্টে সংসার চলে শিবুদের

শিবু দাসের বয়স প্রায় ৬০ বছর। বাঁশের চালন, কুলা, শরপস তৈরি করে জীবন চলে তার। অবশ্য এ কাজ ছাড়া আর কিছু জানেন না তিনি। এতে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে জীবন চাকা ঘোরানোটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। 

শুধু শিবুই নয়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকার এরকম আরও অনেকে রয়েছেন, যারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তবে, করোনাকালে হাতে তৈরি এসব জিনিসপত্র বাজারের তেমন বিক্রি হচ্ছে না। একদিকে কাঁচামাল সংকট অন্যদিকে বিক্রয় অসুবিধা, তারপর অন্য কাজ না পারায় এটাকেই পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন শিবু দাসসহ অন্যরা। 

শিবু বলেন, আমি এ কাজ ছাড়া কিছুই পারি না। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাঁশ সংগ্রহ করে তা দিয়ে কুলা, চালন, শরপস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। এই করোনার মধ্যে বাজার ঠিকমতো বসে না। আর বসলেও তা ভালো বিক্রি হচ্ছে না। বড় কুলা ৫০ টাকা, মাঝারিটা ৪০ আর ছোট কুলা ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করি। আর চালন ও শরপস ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করি। ১৫/২০টা কুলা তৈরি করতে ২-৩ দিন সময় লাগে।

একই পাড়ার শংকর দাস বলেন, এ দাসপাড়ায় ১৩টি পরিবার আছে। যারা সবাই এসব বাঁশের কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু করোনার কারণে খুবই অসুবিধায় রয়েছি। বাজারে গিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়। বিক্রি হয় না, আবার বাইরে থেকে অর্ডার আসাও বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মিরপুর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, গাংনী ও মেহেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে এসব জিনিস বিক্রি করে থাকি।

রঞ্জন দাস জানান, একটি তল্লা বাঁশ ৭০-৮০ টাকায় কিনতে হয়। সেটা কেটে, শুকিয়ে, খিল তুলে চটা করতে ২দিন সময় লাগে। এ থেকে ৫টা কুলো বা চালন হয়। যেদিন তৈরি করি সেদিন দিনে ৮/১০টা তৈরি করা সম্ভব একার পক্ষে। আর আমরা পরিবারের সবাই মিলেই এ কাজ করি।

অজীত দাস জানান, আমরা প্রায় অধিকাংশ মানুষই এই কাজ ছাড়া অন্য কিছু করতে পারি না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে, কিন্তু চালন-কুলার দাম তেমন বাড়ে না। এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো দায় হয়ে যাবে।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনার এ সময়ে সরকারি বিভিন্ন অনুদান আমরা খেটে খাওয়া মানুষদের প্রাধান্য দিয়ে বন্টন করেছি। দাসপাড়ার এসব খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ এবং আমার ব্যক্তিগতসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা ও খাদ্যসামগ্রি দেওয়া হয়েছে।