সারা বাংলা

লেবু চাষে প্রথমবারেই সফল কৃষক আকরাম

বসতবাড়ি পাশে পতিত জমিতে সুগন্ধি পাতি লেবু চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন খুলনার রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন (৬০)। এক বছর আগে তার সৃজিত বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের লেবু। লেবু চাষে তার এমন সাফল্য দেখে এলাকার অনেক মানুষ উৎসাহিত হয়েছেন।

পাইকাররা বাগানে এসেই কিনছেন লেবু। তাই বাজারজাত করার বাড়তি ঝামেলা নেই। প্রতি পিস লেবু তিনি ৩ টাকা করে বিক্রি করেছেন। লেবুর ভালো দাম পেয়ে কৃষক আকরাম হোসেন অনেক খুশি। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী চাষিরা তার এ বাগান দেখে লেবু চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

কৃষি অফিসের সূত্র জানান, লেবু চাষে খরচ কম, লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। চারা লাগানোর এক বছর পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপণের পর একাধারে অন্তত ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সারা বছরই লেবুর চাহিদা রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এ লেবু অনেক উপকারী বলে বর্তমানে বাজারে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। 

কৃষক আকরাম হোসেন জানান, গত বছর আষাঢ় মাসে কৃষক আকরাম হোসেন ৫০ শতক জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে একশ সুগন্ধি লেবুর (পাতি লেবু) চারা রোপণ করেন। চারা ক্রয়, গর্ত তৈরি, সার ও অন্যান্য খরচ মিলে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। চারা রোপণের এক বছরের পর থেকেই তার স্বপ্নের লেবু গাছে ফল ধরা শুরু হয়।   সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় লেবু। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রতিটি গাছে ৮০-৯০টি করে ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে তিনি ১০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করা যাবে। এছাড়া এ বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আকরাম হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

আকরাম হোসেন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় লেবুর প্রজাপতি পোকার কবল থেকে লেবুর পাতা রক্ষার জন্য তিনি এমিথ্রিন প্লাস (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০২ গ্রাম) এবং পাতার দাগ রোগ (এ্যানথ্রাকনোজ রোগ) প্রতিরোধের লক্ষে টিল্ট- ২৫০ ইসি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০৫ মিলি মিটার) ছত্রাকনাশক লেবু বাগানে নিয়মিত স্প্রে করেছেন। এভাবে লেবুর চারাগুলোর নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। এতে চারাগুলো দ্রুত বড় হতে থাকে।  এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর মোল্লা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

লেবু চাষে আগ্রহী অন্যান্য কৃষকদের উদ্দেশে আকরাম হোসেন বলেন, যাদের পরিত্যক্ত জায়গা-জমি রয়েছে, আপনারা তা ফেলে না রেখে লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগান এবং যত্ন নেন। তাহলে দেখবেন এ ফল গাছ একদিকে আপনাকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন এবং ফরমালিন মুক্ত ফল খাওয়ার সুযোগ করে দেবে। আর সর্বোপরি আপনি হবেন এ ফল গাছের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। এজন্য দরকার পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়।   রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, উঁচু ও মাঝারি উঁচু প্রকৃতির দো-আঁশ মাটি লেবু চাষের জন্য উপযুক্ত। চারা রোপণের আগে জমিতে ২/৩টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত ও সমতল করে ৩.৫ মিটার দূরে দূরে সারি করতে হবে। এপর প্রতি সারিতে ৩.০ মিটার পর পর ৫০ সে. মি. চওড়া ও ৫০ সে. মি. গভীর গর্ত তৈরি করা হয়। এরপর প্রতি গর্তের ওপরের স্তরের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত পুনরায় ভরাট করা হয়। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে ৮-১০ দিন পর গর্তের ঠিক মাঝখানে এক বছর বয়সের লেবু চারা রোপণ করা হয়। গর্তে চারা রোপণ করার পর চারদিকের মাটি হাত দিয়ে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিয়ে চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দিয়ে গর্তের মাটি ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে।   তিনি আরও জানান, লেবু চারা রোপণের তিন মাস পর অর্থাৎ গাছের নতুন শিকড় মাটিতে লেগে যাবার পর প্রতি গাছে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০ গ্রাম দস্তা সার গাছের গোড়া হতে কিছু দূরে ছিটিয়ে প্রথম উপরিভাগে প্রয়োগ করা হয়। এরপর চারা রোপণের দশ মাস পর প্রতি গাছে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি, ২০ গ্রাম বোরন ও ১০ বস্তা সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সে. মি. দূরে) ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সার প্রয়োগের পর গাছের গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। তাছাড়া নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে চারার গোড়ার আগাছা পরিষ্কার এবং মাটিতে রসের অভাব হলে লেবু গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। এছাড়া লেবু গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার ফরিদুজ্জামান বলেন, উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আকরাম হোসেন বসতবাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিতে লেবু বাগান করে সফল হযেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া লেবুসহ মাল্টা, আম ও অন্যান্য ফল চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযেগিতা দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের পাশে থেকে লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল চাষে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।