‘শব্দ স্রোতে সময় ভেসে যায়। ভেসে ভেসে দোল দেয় সৃষ্টির পারদ। দ্বাদশ অশ্বে দ্বাদশ আরোহী সময়ের নিখাদ যাত্রী। তাদের টগবগিয়ে চলার পথে দুধারে ফোটে নানান কাব্য। সেই পথেই হাঁটতে যেয়ে মেতে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে নতুন সময়, নতুন চোখ।’
কাব্যের রসদ ভরা বইটি হারিয়ে গেছে চরাচর থেকে, প্রকাশকও হারিয়েছেন শেষ কপিটি। কবিতা হারায় না ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ফুল হয়ে। সুগন্ধ ছড়ানো এই গ্রন্থের বাতাসে পাল খাটানো নতুন প্রজন্ম তাদের সুখানুভূতি প্রকাশ করতে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘পরম্পরা’ আয়োজন করে ১২ কবির কবিতা সংকলনের আসর।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) বিকেলে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জয়নুল সংগ্রহশালা সংলগ্ন ব্রহ্মশৈলীর চারুতলায় বসে আসরটি। মাহমুদ আল মামুনের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন দ্বাদশ অশ্বে দ্বাদশ আরোহী গ্রন্থের সম্পাদক কবি ইয়াজদানী কোরায়শী। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন কবি শরৎ সেলিম।
নতুন চোখে শিল্প ভাবনা তুলে ধরেন শিল্পী মো. রাজন। কবি শামসুল ফয়েজের লেখা নিয়ে কথা বলেন নীহার লিখন। এছাড়া মনতোষ ঘোষের কবিতা নিয়ে অরূপ কিষান, নুরুল ইসলাম মানিকের বিষয়ে হান্নান কল্লোল, আশরাফ মীরকে নিয়ে অনন্য সাঈদ, সাজাহান শিরাজীর লেখা নিয়ে আরাফাত রিলকে, ফরিদ আহমদ দুলালের কবিতা নিয়ে শাখাওয়াত বকুল, যুগল দাসের সৃষ্টি নিয়ে কাঙাল শাহীন, মামুন মাহফুজের লেখার ওপর ফাহিম ফারুক, নাজমুল করিম সিদ্দিকীর কাব্যশৈলী নিয়ে কামাল মুহম্মদ, সরকার হাসান মাহবুবের ওপর আলমাস হোসাইন শাজা, সেলিম আতাউরের লেখার ওপর হাসান জামিল এবং সৃজনশীল প্রকাশক ও কবি ইয়াজদানী কোরায়শীর কাজ নিয়ে সুরঞ্জিত বাড়ই আলোচনা করেন।
আয়োজক কবি শামীম আশরাফ বলেন, ‘অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বইটি শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে শিল্পী আমজাদ দোলনের সংগ্রহ থেকে। তিনি এই বইটির কবিতাগুলো মাঝে মধ্যেই জীবন্ত করে তোলেন তার ঠোঁটের স্পর্শে। বইটি হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মের চর্চার খোরাক যোগানোর জন্য আমজাদ দোলনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
১৯৮৫ সালে ময়মনসিংহের ১২ কবি তাদের ভরাযৌবনে সংকলনগ্রন্থ ‘দ্বাদশ অশ্বে দ্বাদশ আরোহী’ দিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন। তারা যখন জীবনের শেষভাগে, তখন সেসব লেখা নিয়ে আলোচনা হলো।
প্রসঙ্গত, আশির দশকের এই ১২ জন কবির সেসময়কার নানা আসরে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন তসলিমা নাসরিন, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, নির্মুলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, হুমায়ূন আহমেদসহ অনেকে।