সারা বাংলা

মা-বোনকে পিটিয়ে জেলে, জামিনে এসে মারলেন বড় ভাইকে 

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এক নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তার নিজের পরিবারই। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কে এম আব্বাস। বাসায় থেকে নিজের মা ও বড় বোনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। জেল থেকে জামিন পেয়ে বাড়িতে ফিরে এবার আক্রমণ চালান বড় ভাইয়ের ওপর। এই ঘটনায়  আব্বাসের বিরুদ্ধে আবারও মামলা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পূর্ব গাটিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের খন্দকার পাড়া এলাকায়। 

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও ছোট ভাইয়ের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার কে এম আক্কাস জানান, তার ছোট ভাই ছাত্রদল নেতা কে এম আব্বাস একজন মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায়ী। ছাত্রত্ব না থাকলেও সে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। মাদকাসক্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সে ঘরে-বাইরে সর্বত্র সে মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। গত মাসে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় টাকা চেয়ে না পেয়ে মা ও বড় বোনের ওপর অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন চালায়্। এতে রক্তাক্ত বড় বোনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে। এই মামলা থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হওয়ার পর সে আবারও বেপারোয়া হয়ে উঠে। গত ১ আগস্ট কোরবানির দিনে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় গিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় বড় ভাই কেএম আক্কাসের ওপর। লাঙ্গলের ফলা দিয়ে আক্রমনের পর স্থানীয়রা ছুটে এসে আক্কাসকে উদ্ধার করলেও সে গুরুতর আহত হয়।

তিনি আরও জানান, তাকে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছেন বড় ভাই কে এম আক্কাস। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে ছাত্রদল নেতা কে এম আব্বাস। ঘটনার পর ছাত্রদল নেতা কে এম আব্বাসের মা নির্যাতনকারী পুত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ছাত্রদল ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির কাছেও লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

কে এম আক্কাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের বাবা মারা গেছে প্রায় ১২ বছর আগে। ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার ঘারে। দীর্ঘদিন ধরে আমি ছোট ভাই আব্বাসের ভরণ-পোষণ, বাড়ি ভাড়া, নগদ টাকা সব কিছু দিয়েই সহায়তা করে আসছি। সাম্প্রতিক সময়ে সে আমার কাছে আরও ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করছে। এতো টাকা তাকে আমার পক্ষে দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। ছাত্রদল নেতা বনে গিয়ে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার অত্যাচারে আমাদের পুরো পরিবার তছনছ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে মা ও বড় বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবার সে আমার ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। এই অবস্থায় আমরা পুরো পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি ‘

চান্দগাঁও থানায় ছাত্রদল নেতা আব্বাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আবুল বশর। সাতকানিয়া থানাতেও মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন।

পরিবারের ওপর ছাত্রদল নেতার এমন অমানবিক নির্যাতন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন জানান, নিজের মা বোন ও বড় ভাইয়ের ওপর হামলা নির্যাতনের ঘটনা অমানবিক। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা নির্যাতন প্রসঙ্গে ছাত্রদল নেতা কে এম আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।