সারা বাংলা

এবার সাংবাদিককে হুমকি দিলেন খুলনার সেই অফিস সহকারী

নিজ কর্মস্থলের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সহকর্মীদের কখনও চাপাতি দিয়ে কোপানো এবং কখনও গুলি করে হত্যার হুমকিদাতা খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের (পিআইডি) অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান এবার সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার সন্ত্রাসী আচরণের সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই তিনি এ হুমকি দেন।

এদিকে, অব্যহত হুমকির ঘটনায় আতংকিত হয়ে হাবিবের বিরুদ্ধে তার অফিসের এক কর্মকর্তা এবং বাংলানিউজের খুলনা ব্যুরো এডিটর মাহবুবুর রহমান মুন্না থানায় জিডি এন্ট্রি করেছেন। 

শনিবার (১৫ আগস্ট) খুলনা সদর থানায় আলাদাভাবে দুটি জিডি এন্ট্রি করা হয়। 

একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও সন্ত্রাসী আচরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

জিডিতে বাংলানিউজের খুলনা ব্যুরো এডিটর মাহবুবুর রহমান মুন্না উল্লেখ করেন, শুক্রবার (১৪ আগসস্ট) ‘অফিস সহায়কের এত দাপট!’ শিরোনামে সংবাদ প্রচারের পর হাবিবুর রহমান শুক্রবার রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে প্রথমে ০১৫৫৯০৮৮১৭১ নাম্বার থেকে তার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেন। এক পর্যায়ে ‘দুই টাকার সাংবাদিক’ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। ওই রাতে একাধিক নাম্বার থেকে একাধিকবার তিনি ফোন করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ-অশালীন আচরণ করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজাসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা। এক বিবৃতিতে তারা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে শনিবার (১৫ আগস্ট) আঞ্চলিক তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে গত ১৩ আগস্ট অফিস সহায়ক মো. হাবিবুর রহমান কর্তৃক অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি ও মারধরের বিষয়টি উল্লেখ করে অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। 

ডায়রিতে উল্লেখ করা হয়, অফিস সহায়ক মো. হাবিবুর রহমান তথ্য অধিদপ্তর হতে বদলী হয়ে এ দপ্তরে গত ২০১৯ সালের জুন মাসে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে তিনি দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে অহেতুক অসদাচারণ করছেন। তাদের প্রতি অকথ্য ভাষায় ও উচ্চস্বরে গালিগালাজ, অশালীন আচরণ, শারীরিকভাবে আঘাত করতে উদ্যত হন। 

রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীসহ মন্ত্রী, এমপি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে শাসানোরও চেষ্টা করেন। এভাবে তিনি অফিসের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছেন। বিষয়গুলো তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল বলেন, ‘বেপারোয়া হাবিবুরের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি তথ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেবেন।’ 

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছেলেটা বেয়াদব। তার বিরুদ্ধে জিডি হয়েছে। যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ১৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে অফিসে আভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ শুরুর প্রাক্কালে তিনি তার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ না পাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অফিসের বাইরের কাকে যেন চাপাতি নিয়ে আসতে বলেন এবং অফিসের সবাইকে কোপাবেন বলে হুমকি দেন। 

প্রধান সহকারী মো. জাকির হোসেনকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন এবং তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তুই অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখলে তোর হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলবো।’ 

টেলেক্স অপারেটর মো. মিজানুর রহমান সে দৃশ্য মোবাইলফোনে ধারণ করলে উত্তেজিত অবস্থায় তার গায়ে হাত তোলেন এবং কিল ঘুষি দিয়ে লাঞ্চিত করেন। তার এ ধরনের আচরণে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অপমানিত, স্তম্ভিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে কোনো সময়ে হাবিব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর আবারও চড়াও হতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা। 

এ বিষয়ে শুক্রবার রাইজিংবিডিসহ একাধিক অনলাইন পোর্টাল এবং শনিবার জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়।