সারা বাংলা

যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ভারতে মৃত্যু হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধী জব্বারের

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জব্বার (৯০) যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মারা যাওয়ার তথ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করলেও তার ভাই আবু জায়েদ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নয় ভারতে মারা গেছেন এম এ জব্বার। সোমবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৪টার দিকে মিনিটে বার্ধক্য জনিত কারণে মারা যান তিনি।

আবু জায়েদ মোবাইল ফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভারতে মারা যাওয়ার পর ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী তার কাপন-দাফন শেষ হয়েছে। তবে তাকে ভারতের কোথায় দাফন করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি জানাননি।  এমনকি মারা যাওয়ার তথ্য তারা কিভাবে পেলেন সে বিষয়েও কিছু জানাতে রাজি হননি।

যুদ্ধাপরাধী জব্বারের গ্রামের বাড়ি তার বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাচিড়া গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এম এ জব্বার মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৭১-এ তার নেতৃত্বে মঠবাড়িয়ায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হলে শুরু হয় গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এম এ জব্বার মঠবাড়িয়ায় শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, বাড়ি–ঘরে আগুন লাগানো এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

স্বাধীনতার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহত বিনোধ বিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস ও শহীদ জিয়াউজ্জামানের বাবা মতিউর রহমান বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় ২টি মামলা দায়ের করেন। ১৯৭৪ সালের ১৪ মে যজ্ঞেস বিশ্বাসের মামলায় জব্বারসহ ২৬৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মঠবাড়িয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। পরে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই সময় ভোট কারচুপির প্রতিবাদে জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুললে গুলিতে চারজন নিহত হয়েছিলেন। এরপর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান এবং দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হন।

২০০৬ সালে জাতীয় পার্টির টিকিটে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটের মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচন থেকে মহাজোট সরে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় মহাজোটের মনোনয়ন পান। ওই সময় ঋণ খেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। পরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি আত্মগোপনে থেকে দেশান্তরিত হয়ে পালিয়ে যায় । মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট এম এ জব্বারের বিচার শুরু হয়। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁকে আমৃত্যু কারাদ- দেন। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয় ।