সারা বাংলা

বাগেরহাটে অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কয়েক হাজার ঘের

বাগেরহাটে টানা চার দিনের অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার ঘেরের মাছ। নষ্ট হয়েছে সবজি খেত।

নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলা শহরের প্রধান বাজার, মোরেলগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়ক ডুবেছে। অনেকের বাড়ি-ঘরেও পানি উঠেছে। মোরেলগঞ্জ, রামপাল, চিতলমারী, সদর উপজেলায় কয়েক হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর ফুলহাতা গ্রামের আল আমিন, আব্দুল হালিম ফকির, রাকিবসহ কয়েকজন মাছচাষি বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরেই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, নদীতে পানি বাড়ছে। ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে। সুপার সাইক্লোন আম্পান ও জোয়ারের পানিতে চিংড়ি ও মাছের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’

ঘষিয়াখালী গ্রামের কায়কোবাদ মৃধা বলেন, ‘২২ বিঘা জমিতে ৭-৮ লাখ টাকা ব্যয় করে মাছ চাষ করেছিলাম। পানিতে সব ভেসে গেছে। কীভাবে দেনা শোধ করব জানি না।‘

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফরিদ ফকির বলেন, ‘টানা বৃষ্টির সাথে কেওড়া ও পানগুছি নদীতে পানি বাড়ায় বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ৬০০ থেকে ৭০০ ঘের ডুবেছে। এতে চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের অনেকের বাড়ি-ঘরও তলিয়ে গেছে। নদীবেষ্টিত এই ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় যেকোনো দুর্যোগে আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।’

চিতলমারী এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে সবজি গাছের গোড়ায় পানি জমে শিকড় পচে যাচ্ছে। এখন রোদ উঠলেই মারা যাবে গাছগুলো।’

এদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী ও সাগরে জাল ফেলতে না পেরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার জেলে। কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরে এসেছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সমুদ্রে ঝড় হলে জেলেরা সাধারণত বনের খালে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কোন জেলে যদি সমুদ্রে সমস্যায় থাকে তাহলে তাদেরকে আশ্রয় ও উদ্ধারের জন্য বন বিভাগ চেষ্টা করবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ‘এভাবে যদি আরো দুয়েক দিন বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে সবজির বেশ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাগেরহাটের কোথাও কোথাও চিংড়ি ঘের ডুবে গেছে। আমরা জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পেলে সরকারকে জানানো হবে।’