সারা বাংলা

বরগুনার তিন নদীর প্লাবনে দুর্ভোগ চরমে

অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট ‘জো’ তে বরগুনার তিনটি প্রধান নদীর জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণ এবং বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও পায়রা ও বিষখালী নদীতে অবস্থিত দুটি ফেরিঘাট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় যানবাহন জনচলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, অতিবর্ষণ ও অআবশ্যার প্রভাবে বরগুনা বিষখালী নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪৭ সেন্টিমিটার, পায়রায় ৬০ সেন্টিমিটার, বলেশ্বর নদীতে সাড়ে ৪৩ সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতায় জোয়ারের প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় চর ও নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রল বাঁধ ভোঙে লোকালয় ও ফসলী জমি নিমজ্জিত হয়েছে। বাঁধের বাইরে অবস্থিত ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। 

বরগুনা শহরসহ সদর উপজেলার পোটকাখালী, বাওয়ালকার, মাঝেরচর, ডাল ভাঙ্গা, নলটোনা, এম বালিয়াতলী, নিশানবাড়িয়াসহ বেশ কিছু এলাকা, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকির হাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী। 

আমতলীর ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরীঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। 

এছাড়াও পাথরঘাটা উপজেলার পৌরশহরের ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড, পদ্মা বাদুরতলা, চরদুয়ানী, কালমেঘা কুপদোন এলাকা, বেতাগী ও বামনা উপজেলা সদরসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামে বাঁধ ভেঙে আশপাশের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে সদর উপজেলার বরইতলা-বাইনচকটি ও পুরাকাটা-আমতলী ফেরিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালী ও পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন ও জনচলাচল বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুই প্রান্তে যানবাহন আটকা পড়েছে।

বরইতলা বাইনচটকি ফেরিঘাটের খেয়া চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিনদিন ধরে নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বেড়ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন খেয়া পারাপারের যাত্রীরা। ফেরিঘাটের রাস্তা যদি উঁচু করে নির্মাণ করা হতো তাহলে জোয়ারের পানিতে আমাদের এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’ 

আমতলীর গাজীপুর বন্দরের সোহেল রানা বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাজীপুর বন্দর তলিয়ে গেছে। শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্দরের এমন অবস্থা হয়। গাজীপুর বন্দর রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।’

পায়রা ফেরিঘাটের পরিচালক মো. ছালাম খাঁন বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে থাকায় গাড়ি ও মানুষের সড়কে উঠতে পারছে না। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, গত তিন দিন জোয়ারের সময় অন্তত তিন ঘণ্টা করে ফেরি বন্ধ থাকে।’

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. কায়সার আলম বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে চর ও নিম্নাঞ্চলের ঘর বাড়ি তলিয়ে গেছে। তবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ভিতরে পানি প্রবেশ করেনি। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চলছে।’