সারা বাংলা

হুমকির মুখে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র

জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে প্রজনন কেন্দ্রের কুমির, হরিণ ও কচ্ছপের আবাসস্থলগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পলিতে কর্দমাক্ত হয়েছে শেডগুলো, নষ্ট হয়েছে মিঠা পানির পুকুরগুলো। সুন্দরবন বিশেষজ্ঞদের মতে জোয়ারের পানির উচ্চতা যেমন বাড়ছে, তেমনিভাবে প্রজনন কেন্দ্রটির রাস্তা ও অবকাঠামো আরও উঁচু করা প্রয়োজন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনকেন্দ্র করমজল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এবার কয়েক দিনের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় কেন্দ্রটি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’, হরিণ ও কুমির। হঠাৎ করে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে করমজলের রাস্তা, বন্য প্রাণী রাখার শেড ও পুকুরের পাড় উপচে পানি প্রবেশ করে। যার ফলে প্রাণীগুলো ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন সেখানকার বনরক্ষিরা। রাতদিন নজরদারি ও আন্তরিক চেষ্টার ফলে কোনো প্রাণী নদী ও খালে বেড়িয়ে যেতে পারেনি। পানি কমে যাওয়ায় কর্দমাক্ত শেডগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। পুকুর থেকে অপসারণ করা হচ্ছে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা আবর্জনা।

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ৩০০ বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’, ১৯৩টি কুমির ও ৩৬টি হরিণ রয়েছে। এছাড়াও এ বন্যপ্রাণী প্রজনকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময় বিলুপ্ত প্রজাতির ১২টি বাটাগুর বাসকা এবং ৯৭টি কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজেক্টের কর্মচারী ইউসুফ ও হযরত আলী বলেন, ‘আমরা বাটাগুর বাসকা প্রজেক্টে চাকরি করি। এবার হঠাৎ করে জোয়ারের পানি বেড়ে গিয়ে আমাদের করমজলের বিভিন্ন জায়গায় পানি উঠে যায়। বাটাগুর বাসকা যে পুকুরে রয়েছে, সেখানেও পানি উঠেছিল। আমরা প্রাণপন চেষ্টা করে কচ্ছপগুলোকে রক্ষা করেছি। এর থেকে বেশি পানি হলে বিলুপ্ত প্রায় কচ্ছপগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে করমজলের বন্যপ্রাণীরা হুমকির মধ্যে থাকে। এবার জোয়ারের পানিতে প্রজননকেন্দ্রের সব জায়গায় পানি উঠেছিল। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণীগুলো বিপদে পড়তে পারে। বিপদ হতে পারে দায়িত্বরত বনকর্মীদেরও। এসব অনাকাঙ্খিত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এখনই করমজলের অবকাঠামো ও প্রাণী বসবাসের আবাসস্থলগুলোকে উঁচু করতে হবে।’

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘চাকরি জীবনে কখনও বনের মধ্যে এত পানি দেখিনি। প্রাণপন চেষ্টা ও ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে করমজলে থাকা প্রাণীগুলোকে আমরা রক্ষা করেছি। ভবিষ্যতে এর চেয়ে বেশি পানি উঠলে আমাদের বন্যপ্রাণীগুলো রক্ষা করা কঠিন হবে। এ বিষয়ে উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনা এবার সুন্দরবনে একটু বেশি পানি উঠেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ভবিষ্যতের জন্য সুন্দরবনের অবকাঠামো নির্মাণের কথা ভাবছি। প্রাণীদের আবাসস্থল যুগোপযোগি করে গড়ে তোলা হবে।’