অসহ্য শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা, একাকিত্ব, অসহায়ত্ব। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত। এ হচ্ছে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকারের করোনাকালীন অভিজ্ঞতা।
পরিমল কুমার সরকার গত ২৯ জুলাই করোনা আক্রান্ত হন। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পর ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন ছিলেন এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। করোনার সাথে যুদ্ধ করে গত ১৪ আগস্ট করোনা মুক্ত হন তিনি।
অসুস্থ অবস্থায় তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, যদি করোনামুক্ত হন তবে যে কোন মূল্যে এলাকাবাসীকে করোনামুক্ত রাখবেন।
আলাপকালে করোনাকালীন অভিজ্ঞতা ও প্রতিজ্ঞার কথা জানালেন বিরামপুরের এই করোনা জয়ী ইউএনও।
প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরের দিন থেকেই জনগণকে করোনা থেকে মুক্ত রাখতে এলাকায় সচেতনামূলক কার্যক্রম ও অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় গত ১৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে মামলা করেছেন ৪০৩টি, জরিমানা আদায় করেছেন ১ লাখ ৩ হাজার টাকা।
সুস্থ হবার পরদিন থেকেই বিরামপুরকে করোনামুক্ত করতে ব্যাপক অভিযানে নামেন তিনি। অভিযান এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সময় শোনাচ্ছেন নিজের করোনা আক্রান্তের অভিজ্ঞতার কথা। জরিমানা, মামলার পাশাপাশি নিজ হাতে জনগনকে মাস্ক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করছেন।
ইউএনও পরিমল কুমার সরকার জানান, একমাত্র যার করোনা হয়েছে সেই বুঝবে করোনার যন্ত্রণা কতটুকু।
তিনি জানান, দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজে যাবার পর যখন একাই একটি কক্ষে থাকতে হচ্ছিলো তখন মৃত্যুভয় তাকে প্রবলভাবে ঘিরে ধরে। একাকিত্ব মুহূর্তে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা দেখা দেয়। পৃথিবীর সবকিছুই তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো। বারবার চিকিৎসা ব্যয়ভারের বিষয়টি চিন্তা করে অসহায় সাধারণ মানুষের কথাই তাকে বার বার ভাবাচ্ছিলো।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত বিরামপুরে ২৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ জন।