সারা বাংলা

কুড়িগ্রামে আমন চারার ঘাটতি মেটাতে বিকল্প বীজতলা

এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় ব‌্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। কিছু কৃষক অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করলেও অনেকে তা পারছেন না। এদিকে, আমন চারার ঘাটতি মেটাতে আগাম বিকল্প বীজতলা করে তা থেকে চারা বিতরণ করছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাসের টানা বন্যায় জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষকের ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১ হাজার ৪০৯ হেক্টর। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আমন চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও চারা সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না।

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা এলাকার কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন, ‘আমন ধান আবাদের জন্য ৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমনের চারা লাগানোর শেষ সময় হলেও চারা লাগাতে পারছি না। হাতে টাকা-পয়সা নেই। চারা কিনে এনে লাগাব, তার উপায় নেই।’

বন্যা পরিস্থিতি অনুধাবন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা, ভাসমান বীজতলা ও বাড়ির উঠানে ট্রে বীজতলা তৈরি করেছে কৃষি বিভাগ। এসব বীজতলায় হওয়া বিআর-২২ ধানের চারা জেলার ২১ হাজার কৃষককে এক বিঘা করে জমিতে লাগানোর জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করছে কৃষি বিভাগ।

উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর লালদিঘী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাড়িতে ৫২টি ট্রে বীজতলা তৈরি করেছি। এই ট্রের চারা দুই বিঘা জমিতে লাগাতে পারব। এতে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব।’

একই এলাকার কৃষক সেতু মিয়া কৃষি বিভাগের সহায়তার তার জমিতে ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছিলেন। এখন নিজের জমিতে চারা রোপণের পাশাপাশি অন্য কৃষকদেরও তা সরবরাহ করছেন। একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সরকার পাড়ায় কৃষকদের ১ একর জমি লিজ নিয়ে কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগ থেকে ১ বিঘা জমিতে লাগানোর জন্য চারা পেয়েছি।‘

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, এবারের দীর্ঘ বন্যায় কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে জেলার ৯ উপজেলায় আগাম কমিউনিটি, ভাসমান ও ট্রে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সেই আমন চারা জেলার ২১ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক কৃষক এক বিঘা জমির জন‌্য বিনামূল্যে চারা পাচ্ছেন। পাশাপাশি চরাঞ্চলের কৃষকদের সবজি ও ডাল জাতীয় ফসলের বীজ এবং সার সরবরাহ করা হচ্ছে।