সারা বাংলা

‘দাদা-দাদি’র কোরাসে জন্ম নিচ্ছে নতুন জাতের সোনালী

আমেরিকান আরআইআর জাতের লাল রংয়ের মোরগ (দাদা) ও মিশরের সাদা-কালো ফুটকি রংয়ের ফাউমি (দাদি) মুরগির কোরাসে সিরাজগঞ্জে জন্ম নিচ্ছে নতুন জাতের সোনালী মুরগি।

জেলার উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার চোড়িয়া উজির গ্রামে রাশেদ পোল্ট্রি অ‌্যান্ড হ্যাচারিতে এই সোনালী মুরগি উদ্ভাবন করে সফল খামারির সারিতে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশে সোনালী মুরগির উদ্ভাবক সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ-জামাল।

ডা. শাহ-জামাল ২০০৭ সালে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন এই পোল্ট্রি ফার্ম। তখন ছিলো সোনালী লেয়ার মুরগি। ২০১৫ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক বিভাগীয় সহকারী কর্মকর্তা ডা.শাহ-জামাল অবসরে যান। চাকরি শেষে ফার্মটি সেসময় পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করেন। ২০১৭ সালে বার্ড ফ্লুর কারণে খামারের বেশির ভাগ মুরগি মারা যায়। পরে ২০১৮ সালে আবার শুরু করেন খামার। 

অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এখন সেটি পরিণত হয়েছে এক বিশাল খামারে। সাহস আর দৃঢ় মনোবলের কারণে বর্তমানে তিনি একজন সফল খামারি এবং উদ্যোক্তা। ২০১৮-১৯ সালে খামারের মুরগির মাধ্যমে প্রতি মাসে এক লাখ ৬০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন তিনি।

বর্তমানে সাড়ে চার বিঘা জমির ওপর একটি ছয় তলা, একটি তিন তলা বিল্ডিং ও পাঁচটি টিনশেড ঘর নিয়ে পোল্ট্রি অ‌্যান্ড হ্যাচারি মুরগির খামার তার। মুরগির সংখ্যা এখন ২০ হাজার। প্রতিদিন ডিম সংগৃহীত হয় প্রায় সাড়ে নয় হাজার। তিন দিন পর পর খামার থেকে হ্যাচারির মাধ্যমে ১৯ হাজার বাচ্চা ফুটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করা হয়।

রাশেদ পোল্ট্রি অ‌্যান্ড হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী সোনালী মুরগির উদ্ভাবক ডা.শাহ-জামাল বলেন, ‘দেশি মুরগির মাংসের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই) উদ্ভাবন করে। গবেষণায় আমিও ছিলাম। সে কারণে চাকরির বয়স শেষে নিজেই তৈরি করেছি এই ফার্ম। আমেরিকার আরআইআর লাল রংয়ের মোরগ (দাদা) ও মিশর থেকে আনা সাদা-কালো ফুটকি রংয়ের ফাউমি (দাদি) দিয়ে এই হ্যাচারিতে জন্ম হচ্ছে সোনালী মুরগি। দেশি মুরগির মাংসের চাহিদা মেটাতে বিগত কয়েক বছরে সোনালী জাতের মুরগির প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুব সহজেই এ জাতের মুরগি পালন করা যায়। দেশি মুরগির তুলনায় মাংসের পরিমাণও অনেক বেশি। ইতিমধ‌্যে খামারিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নতুন জাতের এ সোনালী মুরগি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলার নতুন ও পুরাতন খামারিরা এই হ্যাচারি থেকে মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করছে।’

‘তবে করোনাভাইরাসের কারণে খামারে লাভের পরিমাণ কমে গেছে’ উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। এ কারণে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় খামারের বাচ্চা বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। এছাড়া, খামারে ৩০ জন শ্রমিকের বেতন দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে খামারে অনেক ক্ষতি হয়েছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান রাইজিংবিডিকে জানান, সোনালী মুরগির খামারটি খুব ভালো। আমাদের দেশের বেকার যুবকেরা একটি করে খামার স্থাপন করে এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে খামারের পরিচর্যা করতে পারলে বেকারত্ব ও দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন।