সারা বাংলা

নেত্রকোনায় ট্রলার ডুবি: উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে আরও দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট প্রানহানি হয়েছে ১২ জনের। সেই সঙ্গে উদ্ধার অভিযানও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সোহেল রানা বলেন, ‘ট্রলার ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর কেউ নিখোঁজের ব্যাপারে কারও কোনো দাবি না থাকায় শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’ 

এদিকে নিহতদের পরিবারকে সরকারি সহায়তা তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে যারা সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দা তাদের পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে দশ হাজার ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আর যারা নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা তাদের পরিবারকে বিশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ট্রলার ডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টম্বের) জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া সঙ্গে সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্রলার ডুবিতে নিহত সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশার ইনাতনগর গ্রামের লুৎফুন্নাহারের স্বামী আব্দুল ওয়াহাব বাদী হয়ে ছয় জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। এর মধ‌্যে পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

গ্রেপ্তার কৃতরা হলেন- বাপন মিয়া (৩২), ট্রলার চালক আবাল মিয়া (৩৫) ও সোহাগ রহমান (৩০), সহযোগী জাফর মিয়া (২৮) এবং বাবুর্চী বাদল মিয়া (৩০)। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার পাটুলি গ্রামে। ট্রলার চালক সোহাগ মিয়া ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ট্রলার চালক সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থেকে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরাকোনায় যাচ্ছিলো। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজনগর হলদিয়া গ্রামের সামনে গুমাই নদীতে বালু বোঝাই একটি স্টিল বডি নৌকার সঙ্গে ট্রলারটির ধাক্কা লাগে। এতে যাত্রীবাহী ট্রলারটি কাৎ হয়ে ডুবে যায়। ট্রলারের বেশিরভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অনেকেই নদীতে তলিয়ে যায়। 

এ ঘটনায় গত তিন দিনে মোট ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর এলাকার ওয়াহাব মিয়ার স্ত্রী লুৎফুন্নাহার বেগম (২৬) ও তার মেয়ে ইয়াসমিন (৩), হামিদা খাতুন (৪৫), মজিদা আক্তার (৩০), অনিক (৫) জাহিদ (৩), লাকি আক্তার (৩৫), টুম্পা (৫), সুলতানা আক্তার (৪৫) এবং নেত্রকোনা জেলা সদরের মেদনী গ্রামের মুজাহিদ হোসেন (২০)। 

আজ শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার হলদি বিল থেকে রতন মিয়া (৩৫) ও মনিরা আক্তার (৫) নামে আরও দুই জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।