সারা বাংলা

প্রভাবশালীদের দখলে খাল, ১০ হাজার একর ভূমি বিপর্যয়ের মুখে 

মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলা সদর এলাকায় মাধোর খাল (প্রাচীন নাম রামসাগর খাল) চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। এই খালের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। খাল থেকে আরসিসি পিলার তুলে সীমানা প্রাচীরসহ নির্মাণ করা হয়েছে পাকা স্থাপনা।  এরফলে কাতলাশূর, ধোয়াইল, ফলিয়া, সিন্দাইন ও সূর্যকুণ্ডু বিল এলাকার প্রায় ১০ হাজার একর কৃষিজমি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দখলদাররাদের দাবি, তারা জমি কিনে এসব স্থাপনা তৈরি করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরের কাজী সালিমা হক মহিলা কলেজ এলাকায় খাল ও পাড় মিলিয়ে ২৫ শতাংশ জমির ওপর বহুতল ভবন তৈরির উদ্দেশ‌্যে আরসিসি পিলার দিয়ে পাঁচ ফুট দেয়াল নির্মাণ করেছেন মজনু শাহ নামের এক ব্যবসায়ী। এছাড়া, প্রায় একশ ফুট দীর্ঘ ইটের দেয়াল তুলে মাটি ভরাট করে বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কলেজ এলাকায় খালের ডান তীরে সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজও শুরু করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, সদরের বাঐজানি এলাকা থেকে মধুমতি-নবগঙ্গা সেচ প্রকল্পের (এমএন প্রজেক্ট) মূল খাল থেকে শুরু (উত্তর-দক্ষিণ) হয়ে কাতলাশূরির বিলে পড়েছে। খালের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। দখলে পড়ে সংকুচিত হয়ে কোথাও কোথাও ৩-৪ ফুটে এসে ঠেকেছে।  

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খাল ও খালপাড়ে অবকাঠামো নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালের মূলধারা সংকুচিত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি নামতে পারে না। আর শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়বে।  

প্রবীণ সংবাদকর্মী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আঠারো শতকে ভূষণা অঞ্চলের জমিদার রাজা সীতারাম রায়ের সময়ে সেচ সুবিধার জন্য এই খাল খনন করা হয়। উপজেলা সদরের বড় জলাধার ঘোপ বাঁওড়। পদ্মার শাখা মধুমতি নদীর সঙ্গে যুক্ত এই বাঁওড়ের আরেক নাম রামসাগর। বাঁওড়ের সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয়ভাবে এই খালটি রাম সাগরের খাল নামেও পরিচিত। 

সদরের কানাই নগর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার অধিকারী (৭৫) বলেন, ‘শৈশবে খাল ২০-২৫ ফুট প্রস্থ দেখেছি। এখন সেই খাল কোথাও কোথাও ৩-৪ ফুটে এসে ঠেকেছে।’ 

সদরের শ্যামনগরের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘খালটি কৃষি ও কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খালের পানি সদরের কাতলাশূর, ধোয়াইল, ফলিয়া, সিন্দাইন ও সূর্যকুণ্ডু বিলে সেচকাজে ব‌্যবহৃত হয়। কিন্তু খাল প্রায় মরে যাওয়ায় বর্ষাকালে দশ হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। আর শুষ্কমৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। এতে প্রায় কৃষিতে বিপর্যয় নেমে আসে।’

সদর ইউপি চেয়ারম্যান রাবেয়া বেগম বলেন, ‘খালের মধ্যের জমি কোনো ব্যক্তির হতে পারে না। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় তুলবো।’

খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে রাইজিংবিডিতে ব্যবসায়ী মজনু শাহ বলেন, ‘খালের পাশে কেনা জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে মোহম্মদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ রাসেল বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগ দিয়েছি। খালের দুই পাড়ে অনেকেই স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। জরিপ প্রতিবেদন দেখে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) মো. মিজানূর রহমান বলেন, ‘খালটি সরকারি জমিতে থাকলে রেকর্ড যাচাই করা হবে।’ খালের জমি দখলমুক্ত করার উদ‌্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।