সারা বাংলা

দেউন্দি চা বাগানের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো মেরামত হয়নি

অন‌্যতম বড় ও পুরনো এবং দেড় হাজার চা শ্রমিকের কর্মস্থল দেউন্দি চা বাগানের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো আজও মেরামত হয়নি। দ্রুত মেরামত না হলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এই চা বাগানটির যোগাযোগ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের বাজার টিলা ব্রিজটি ঝুঁকি নিয়ে কোনোভাবে টিকে আছে। মাঝে মধ্যে বাগানের পক্ষ থেকে শ্রমিকরা বাঁশ ও বালুভর্তি বস্তা দিয়ে ব্রিজটিকে রক্ষার চেষ্টা করছেন।

এদিকে, ফাঁড়ি বাগান গ্যালানিয়া ব্রিজটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বদরগাজী ব্রিজটির মাঝখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একইভাবে বাগানের এক নম্বর ব্রিজ, চার নম্বর ব্রিজ, সোনাই বস্তি ব্রিজ, ছয় নম্বর ব্রিজের অবস্থাও বেহাল।

বাগানের প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে বালু ব্যবসা করে। বালুভর্তি ট্রাক ব্রিজগুলো দিয়ে চলাচল করছে। এরমধ্যে বৃষ্টি হলেই ব্রিজগুলোর পাশ থেকে বালু মাটি সরে যাচ্ছে। তাই যতই দিন যাচ্ছে ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।’

জানা গেছে, বাগান থেকে চলে আসা বিভিন্ন ছড়া থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। আবার ব্রিজ দিয়ে বালুভর্তি ট্রাকও চলাচল করে। এসব কারণেই ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেকোনো সময়ে ব্রিজগুলো ভেঙে বাগানের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্রিজগুলো মেরামত ও নতুন করে নির্মাণ করার জন্য চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বাগানের পক্ষ থেকে বহু আগে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। এর অনুলিপিও দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়নি। 

১১৩৮ হেক্টর পাহাড়ি জমির এ বাগানে বাসরত ৬৫০০ লোকের মধ্যে ১৪০০ শ্রমিক চা পাতা উৎপাদনে জড়িত আছে। এরমধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে এসব ব্রিজ দিয়ে পাতা বহনকারী ও বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মিশুক কুমার দত্ত বলেন, ‘পুনঃনির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। দেউন্দি থেকে লালচান্দ রাস্তায় দুই কিলোমিটার পাকাকরণ চলমান আছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ব্রিজগুলো মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করা হবে। তবে অতিগুরুত্বপূর্ণ বদরগাজী ব্রিজটি আগে নির্মাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলায় ঐতিহাসিক রঘুনন্দন পাহাড়ের অবস্থান। এ পাহাড়ের পাশেই চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নে ১৮৮৯ সালে পতিত জমি আবাদ করে ১১৩৮ হেক্টর জমিতে দেউন্দি বাগানের যাত্রা শুরু হয়। টিলায় টিলায় রোপণ করা হয় চা গাছ। গাছ থেকে শ্রমিকরা সবুজ পাতা সংগ্রহ করেন। পাতা ফ্যাক্টরিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এমনভাবে শুরু থেকে বাগানটি মানসম্মত চা পাতা উৎপাদন করে আসছে। এ পাতা দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হয়। শুরুতে এ বাগানের চা পাতাগুলো বিক্রি করতে চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে পাঠানোর জন্য ট্রলিতে করে নিয়ে আসা হতো শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে। পরে এ প্রথা বাতিল হলে সড়ক পথে শুরু হয় চা পাতা সরবরাহ।

এরপর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সড়ক পথে গাড়ি করে সোজা দেউন্দি বাগানের ফ্যাক্টরিতে, আবার এখান থেকে চান্দপুর তেমুনিয়া হয়ে চুনারুঘাট উপজেলা শহরে ও একই স্থান থেকে লালচান্দ বাগান হয়ে শাহজিবাজার এবং মাধবপুর উপজেলা শহরে যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কিন্তু এসব সড়কের দেউন্দি বাগান এলাকার বিভিন্ন স্থানের ব্রিজগুলো আজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ব্রিজগুলো ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।