সারা বাংলা

আবারও মুখরিত হবে কলেজ প্রাঙ্গণ, আশা জামাল মিয়ার

কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিচিত মুখ ও মামু নামে সুপরিচিত মোহাম্নদ জামাল মিয়া (৩৮)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে ২৭ বছর ধরে আচার বিক্রি করে আসছেন তিনি।

কিন্তু করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কলেজে আসাও বন্ধ, তাই তার তৈরি করা আচার খাওয়ার মানুষও নেই। কিন্তু আচার না বিক্রি হলে তো জামাল মিয়ার চুলায় হাড়ি উঠবে না। তাই কলেজ বন্ধ থাকা সত্বেও গত কয়েকদিন ধরে কলেজের সামনে আচার নিয়ে আসছেন মোহাম্নদ জামাল মিয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পুনিয়াউট নয়নপুর এলাকায় থাকেন জামাল মিয়া। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘গত ২৭ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে আচার বিক্রি করি কিন্তু এত দুর্দিন এর আগে কখনও আসেনি।’

এসময় আবেগ্লাপুত হয়ে পড়েন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এই করোনা আমার মতো গরীবকে আরও অসহায় করে দিয়েছে। আমাদের এখন বড্ড দুর্দিন। সারাদিন আচার বিক্রি করে যে আয় হতো তা দিয়ে দুই ছেলে-এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ মোট পাঁচজনের সংসার চলতো। এখন তেমন বেচা-বিক্রি নাই। আচার বিক্রি হয় না বলে আয়-রোজগারের পথ বন্ধ। করোনার লকডাউনে পুঁজি ভেঙে খেয়েছি। এখন হাতে আর তেমন কিছু নেই। তাই বাধ‌্য হয়ে আচার নিয়ে আবারও বসেছি।’

জামাল মিয়া আরও জানান, আচার বিক্রি ছাড়া অন্য কোনো কাজকর্ম না শেখাতে করোনার সময় ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাটে মানুষ নেই। আর মানুষ না থাকলে কে খাবে আচার?

করোনার সময় সরকারি তেমন কোনো সাহায্য পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার শুধু ২০০ টাকা দিয়ে ২০ কেজি চাউল পেয়েছি।  এছাড়া, আর কোনো কিছু দিয়ে কেউ সহায়তা করেননি।  আজ সকাল সাড়ে ৮টায় কলেজের সামনে বসেছি দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে কিন্তু তার মধ্যে খরচ আছে ১৫০ টাকা। এই সামান‌্য অর্থ দিয়ে কীভাবে সংসার চলবে এই নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।’

দেশ থেকে দ্রুত করোনা চলে যাবে। সবাই স্কুল-কলেজে ফিরে আসবে, আবারও মুখরিত হবে কলেজ প্রাঙ্গণ—  এই আশায় পথ চেয়ে আছেন মোহাম্মদ জামাল মিয়া।