সারা বাংলা

খুলনার ৮২২ দোকানে তামাক-পণ‌্যের বিজ্ঞাপন, যেকোনো সময় অভিযান 

খুলনা শহরের মোট ৮২২টি দোকানে অবৈধভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে তামাকজাতদ্রব্যের বিভিন্ন ধরনের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন।

তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল উল্লেখযোগ্য। এসব দোকানে ব্যানার, পোস্টার, স্টিকার, ফ্লেয়ার, উইন্ডো, বিলবোর্ড, ক্যাশবাক্স, প্রমোশনাল স্টিকারসহ অন্যান্য উপায়ে প্রায় ১৮ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ‌্যে, দি ইউনিয়ন’র অর্থায়নে খুলনা সিটি করপোরেশন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিয়াম’র সহযোগিতায় ‘এইড ফাউন্ডেশন’ নগরীতে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এদিকে, এ জরিপের ফলাফল ও অপরাধ প্রতিবেদন বুধবার খুলনা জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাক্সফোর্স কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কোনো মুহূর্তে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত জরিপের লক্ষ‌্য ছিলো খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় যে সমস্ত দোকানে তামাকজাতদ্রব্য বিক্রি করা হয় সেখানে কী ধরনের অবৈধ বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে—সেটি তালিকাভূক্ত করা। যাতে টাস্কফোর্স কমিটি সহজেই অবৈধ বিজ্ঞাপন উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।

ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে দেখা গেছে, শহরে মোট ৮২২টি দোকানে অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন ব্যবহার হচ্ছে। যে সমস্ত দোকানে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, সেখানে তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল এগুলোর আধিক্য পাওয়া যায়। অবৈধ বিজ্ঞাপনের মধ্যে ব্যানার, পোস্টার, স্টিকার, ফ্লেয়ার, উইন্ডো কমন বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিলবোর্ড, ক্যাশবাক্স, প্রমোশনাল স্টিকারসহ প্রায় ১৮ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। জরিপটিতে অবৈধ বিজ্ঞাপন প্রচারকারী প্রত্যেকটি বিক্রয় কেন্দ্রের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেরুয়ারি মাস থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনসহ খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা সদরে পরিচালিত হচ্ছে তামাকের, বিজ্ঞাপন, প্রমোশন ও স্পন্সরশিপ বিষয়ক ডিজিটাল জরিপ। এর মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক অ‌্যাড.  মো. মাছুম বিল্লাহ  জানান, এ ধরনের অবৈধ বিজ্ঞাপন ব্যবহারের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিসমূহ প্রধানত কিশোর ও যুব সমাজকে টার্গেট করছে। তাদের মধ্যে তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার বিশেষ করে সিগারেট সেবনের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। যা আমাদের যুব সমাজকে তামাকের কালো থাবায় আচ্ছাদিত করছে। যে কারণে এ জরিপের মাধ্যমে তারা বিক্রি ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে প্রশাসনের কাছে তালিকা দিয়েছেন। দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, খুলনা জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাক্সফোর্স কমিটির এক সভা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলী সভাপতিত্ব করেন। সভায় খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে জরিপের রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় আরো গতিশীল করা, পাবলিক প্লেসে ধুমপানমুক্ত এলাকা সম্বলিত সাইনবোর্ড প্রদর্শন নিশ্চিত করা এবং তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও প্রচার প্রচারণা রোধে পরিচালিত সার্ভের রিপোর্ট অনুসারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে শাখায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় খুলনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহ. পরিচালক মো. আইনাল হক, আনসার ভিডিপির সহ. জেলা কমান্ডেট আবদুল্লাহ আল মামুন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক‌্যাল অফিসার ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক পারভীন আক্তার, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আবুল আলম, সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এ্যাড.  মো. মাছুম বিল্লাহ ও এইড ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার কাজী মোহাম্মদ হাসিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।