সারা বাংলা

আর কত বয়স হলে বয়স্কভাতা পাবেন আমেনা 

আমেনা বেগমের (৯৮) বয়স একশ ছুঁইছুঁই। এই বয়সে তিনি কানে একেবারেই শুনতে পান না। চোখে দেখেন না বললেই চলে।

কুঁজো হয়ে গেছেন, ভাঁজ পরে ঝুলে গেছে শরীরের চামড়া। রোগ–শোকে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেছেন তিনি। কারও সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না এক কদমও।

এমন শরীর নিয়েও হতদরিদ্র বিধবা এই বৃদ্ধাকে ছুটে চলতে হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সচ্ছলতার আশায় একটি বয়স্কভাতা কার্ডের জন‌্য নিয়মিত ধরণা দিতে হয় তাকে। আশ্বাস মিললেও এখনো তার কপালে জোটেনি সেই সোনার হরিণ বয়স্কভাতা কার্ড।

বৃদ্ধ আমেনার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা গ্রামে। আমেনার স্বামী লালন শেখ মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। সহায়–সম্পদ বলতে ছিল বাড়ির ভিটেটুকু। সেটিও অন্যের কাছে বিক্রি করে গেছেন লালন শেখ। সংসার জীবনে ছয় ছেলে  ও এক মেয়ের জন্ম দেন আমেনা। তবে এক মেয়ে ও এক ছেলে মারা গেছেন। এখন তিনি সেজো ছেলে ইউনুস শেখের বাড়িতে থাকেন। জীবন সায়াহ্নে এসে খেয়ে না-খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে।

এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানান,  জাতীয় পরিচয়পত্রে আমেনার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৪২ সালের ৬ মে। সে হিসেবে বয়স ৭৮ বছর পেরিয়েছে। অনুমান করে জন্মতারিখ দেওয়ায় বয়স কমে গেছে তার। কিন্তু তার প্রকৃত বয়স আরো বেশি।  তার বড় ছেলে ছিরু শেখ তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স (১৯৫০) ৭০ বছর। মা ও বড় ছেলের মধ্যে বয়সের ব্যবধান মাত্র ৮ বছর— যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। 

স্থানীয় প্রবীণ সাইদুর রহমান (৭০),  আলতাফ হোসেন মোল্লা (৭৫) ও আছিয়া বেগম (৭০)  জানান, আমেনা খাতুনের বয়স একশ’র ওপরে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তাকে দেখে আসছি আমরা। আমাদের প্রশ্ন, আর কত বয়স হলে বয়স্কভাতা পাবেন আমেনা?

ছেলে ইউনুস শেখ বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। বসতবাড়ির পাঁচ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো জমি নাই আমার। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করি। ধার দেনা করে খুব কষ্টে নিজে চলি। এর মধ্যে অসুস্থ মারে ওষুধ কিনে খাওয়ানো লাগে। আর কোনো ভাই-বোন মায়ের খবর নেয় না।’

ইউনুস শেখ আরও বলেন,  ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে বয়স্কভাতা কার্ডের জন্যি কতবার গেছি, তার কোনো হিসেব নাই। তিন-চার হাজার টাহা চায়। টাহাও দিতি পারিনে আমার মার কার্ডও হয় না। সবাই খালি কথা দেয়, কেউ কথা রাহে না’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সর্দার বলেন, ‘তার ওয়ার্ডে বয়স্কভাতা যোগ্য নারী–পুরুষ রয়েছেন ১০০–১৫০ জন। সেই তুলনায় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে খুবই কম। তাই তাকে কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষিদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা জানান, এ ধরনের কোনো বয়স্ক নারী ভাতার জন্য এসেছেন বলে তার মনে নেই।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী জয়নূর রহমান জানান, ৯৮ বছর বয়সেও হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধা বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই নারীর বয়স্কভাতা কার্ডের জন‌্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও মহম্মদপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইউএনও আবু সুফিয়ান জানান, বৃদ্ধা আমেনা খাতুনের বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। তার বয়স্কভাতা কার্ডের জন‌্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে।