সারা বাংলা

সংস্কার নেই ২২ খালের, জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ

অল্প বৃষ্টিতেই বরিশালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তারা বলছেন, নগরীর বুকে বয়ে যাওয়া প্রায় ২২টি প্রাচীন খাল ভরাট, দখল ও সংস্কারের অভাবে এ সমস্যা হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, কীর্তনখোলা নদীর পোর্ট রোড ব্রিজ পয়েন্ট থেকে বরিশাল নগরের মাঝ দিয়ে পশ্চিমে বয়ে গেছে সবচেয়ে বড় জেল খাল। এই খাল থেকেই নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটে।  এই খালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য  ছিল- নগরীতে যত বৃষ্টিই হোক না কেন, জেল খাল দিয়ে সহজেই পানি নেমে যেতো।  আজ সেই খাল মৃত প্রায়।

খাল দখল, ভরাট ও অপরিছন্ন থাকায় পানি নামতে পারছে না

২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে খালটি পরিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি খালটি দখলমুক্ত করা হয়।  কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই অবস্থা আগের মতো হয়ে যায়।

বরিশাল নগরীর পানি নেমে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খালগুলাে হলো-সাগরদী, চাঁদমারী, লাকুটিয়া, নবগ্রাম, ভাটারা, লাকুটিয়া, নবগ্রাম, জাগুয়া, আমানতগঞ্জ, টিয়াখালী, নাপিতখালী, ভেদুরিয়া, কাশিপুর, কলাডেমা ও কড়াপুর খালসহ ২২টি খাল। সবগুলো এখন মৃত প্রায়।  খালগুলোর দুই পাশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও অপরিছন্ন থাকায় এখন আর পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে নগরীতে বৃষ্টি কিংবা নদীর পানি প্রবেশ হওয়ায় পর পানি নেমে যেতে পারছে না। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে নগরীর বেশকিছু এলাকা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিপলু রাইজিংবিডিকে বলেন, খালগুলো নগরবাসীর সৌভাগ্যের প্রতীক ছিল।  কিন্তু এখন মৃতপ্রায়। নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

এদিকে, বরিশাল নগরী অল্পবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হওয়ায় সৃস্ট দুর্ভোগের সমস্য সমাধানের লক্ষ্যে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। তারা বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছে।

বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খালগুলো আজ সংকীর্ণ ড্রেনে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরে জনগণের অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালগুলো সংস্কার ও পুনরুদ্ধার করা খুবই জরুরি। 

ড্রেন সংস্কার ও খাল পুরুদ্ধারের দাবিতে বাসদের কর্মসূচি  

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, বর্তমান সময় বরিশালের নদীগুলোতে পানি বেড়েছে।  এ কারণে নগরীতে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।  কিন্তু নদীতে পানি হ্রাস পেলেও নগরীর খালগুলো ভরাট থাকায় পানি নামতে পারছে না।  তাই সংস্কার প্রয়োজন।

বিসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ডা. মো. রবিউল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, জেল খাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক ময়লা বা বর্জ্য উত্তোলন করা হচ্ছে।  এর মধ্যে সবই পলিথিন ও প্লাস্টিক। মাটি বা অন্য কোনো বর্জ্যের ছিঁটেফোটাও নেই। 

তিনি বলেন, গত ৬ দিনে ৩০০ মিটারের বেশি খাল পরিস্কার করা হয়েছে। নগরীর সব খালে পানির গতি কমিয়ে দিয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, নগরীর খালগুলো খনন, তীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  প্রস্তাবিত ওই প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ পেলেই নগরীর খালগুলোর হারানো চেহারা আবার ফিরে পাবে। নগরী জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।

সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বরিশাল নগরীর সব খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কার,  তিন হাজারের অধিক টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  ওই প্রকল্প দুটি পাশ হলে নগরী আরও উন্নত হবে। তবে নিজস্ব উদ্যোগে বিসিসি নগরীর খালগুলো পরিছন্নতার কাজ শুরু করেছে। আশা করি, অধিকাংশ সড়ক জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখা যাবে।