সারা বাংলা

হাঁস পালন করে দিনবদল

উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন করে দিন বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের গ্রামাঞ্চলের অনেক গৃহবধূ ও বেকার নারী-পুরুষের। 

এই জেলার ৯টি উপজেলায় ২৩৬টি খামারে এখন হাঁস পালন হচ্ছে।  এই খামারিদের সাফল্যে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে গড়ে তুলছেন ছোট-বড় খামার।  এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে খামার ও খামারির সংখ্যা। 

সরেজমিনে গিয়ে কয়েকজন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ব্যাংক ঋণ ও নিজের কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই।  এদের মধ্যে নুরুল ইসলাম, মাসুদ রানা ও মরিয়ম প্রথমে ৮০০ থেকে ৯০০ পিস হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন।  ধীরে ধীরে বাচ্চাগুলো বড় হয়ে তিন মাস পরই ডিম দেওয়া শুরু করে।  হাঁসের পেছনে কঠোর পরিশ্রমে ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকে তাদের।  এভাবে হাঁসের খামার গড়ে জেলার অনেকেই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

উল্লাপাড়া উপজেলার একজন সফল খামারি মো. নুরুল ইসলাম জানান, বেকার অবস্থায় বিয়ে করায় পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী।  অভাবের কারণে পেটের দায়ে অন্যের হাঁস-মুরগির খামারে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন।  সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১০ সালে নিজ এলাকায় হাঁসের খামার করার পরিকল্পনা করেন।  প্রথমে ৯০০ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন।  কঠোর পরিশ্রমে যে কোনো কাজে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে প্রমাণ করেছেন নুুরুল ইসলাম।  তার খামারে এখন ২ হাজার ৪শ হাঁস রয়েছে।

কামারখন্দের আরেক খামারি মাসুদ রানা জানান, হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ৮০০ হাঁস পালন করে তিনি সফল হয়েছেন।  এই হাঁসের খামারে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। 

মাসুদ রানা জানান, মাত্র সাড়ে ৪ মাস বয়সেই খাকি ক্যাম্ববেল হাঁস ডিম দিতে থাকে।  একটি হাঁস বছরে ৩শ ডিম দিয়ে থাকে।  টানা ৩ বছর পর্যন্ত খাকি ক্যাম্ববেল হাঁস ডিম পাড়ে।  এ হাঁসের মাংস মুরগির মতোই পুষ্টিকর। এই হাঁস পালনে বেশি পানিরও প্রয়োজন হয় না। 

একই উপজেলার সফল হাঁস পালনকারী মরিয়ম বেগম জানালেন, পাঁচ বছর আগে সংসারে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করেছেন তিনি।  তার এলাকার একজন সফল খামারির পরামর্শ নিয়ে ৫০০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন।  এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন রোগের কারণে কিছু হাঁস মারা গেলেও তার প্রায় সাড়ে ৩শ’ হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে।  বাড়ির পাশেই বিশাল মাঠ থাকার কারণে বাড়তি খাবার দিতে হয়নি।  মাঠের মধ্যে থাকা ছোট ছোট মাছ, শামুকই খাদ্য।  হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভাল ভাবেই চলছে।  সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও তিনি বাড়তি টাকা আয় করতে পারছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, জেলায় ২৩৬টি হাঁস পালনের খামার রয়েছে। ভাসমান পদ্ধতিতে হাঁস পালনে খরচ অনেকটাই কম হয়।  লাভ তুলনামূলক অনেক বেশি।  খামারিদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করতে পারলেও হাঁসের চিকিৎসা, টিকা ও পরামর্শ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।