সারা বাংলা

সুবর্ণচরে মাকে পাঁচ টুকরো, যেভাবে হত্যার পরিকল্পনা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের ছেলে হুমায়ুনসহ সাত সহযোগী মিলে নুরজাহান বেগমকে হত্যা করে টুকরোগুলো পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। 

ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, নৃশংস রহস্যাবৃত এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে তার ছেলে হুমায়ুন কবির (২৮) বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সঙ্গে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। একই সঙ্গে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

ব্রিফিংয়ে ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নিহত নারীর ছেলে হুমায়ুন তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।  ওই নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মা রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদের উপর ঋণ নেয়। ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।  হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে জানায়।

মা হুমায়ুনকে তার ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলে। হুমায়ুন প্রতি উত্তরে মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করার কথা বলে। এতে তার মায়ের অসম্মতি ছিল। অপরদিকে নুরজাহান তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। এ টাকা পরিশোধের জন্য তিনি ভাইকে প্রায়ই চাপ প্রয়োগ করতেন।  এ কারণে দুলালের ছেলে কালাম ও জামাই সুমন নুরজাহানের ওপর রুষ্ট ছিল। এ ছাড়াও প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। তাই তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগীতা করে।

ডিআইজি জানান, হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানিয়েছে- বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে ২ শতাংশ হামিদকে, বাকী ৮ শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়া হবে বলে মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।  তারপর মায়ের জমি সমান ৫ ভাগে ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতিতে এরা সবাই গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের উপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হুমায়ুন, কালাম, সুমন ও অন্যান্য আসামিদের সহযোগীতায় রাতে বালিশ চাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। 

ডিআইজি জানান, সাত আসামির মধ্যে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।  এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।  একই সঙ্গে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নীরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। 

প্রেস ব্রিফিংকালে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো.আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত  ৭ অক্টোবর বিকেলে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের উত্তর জাহাজ মারা গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে আট ছেলে ও এক মেয়ের জননী নুরজাহান বেগমে টুকরো মরদেহের সন্ধান মেলে। এর আগে ছেলে হুমায়ুন জানায়, ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ। পরে স্থানীয় এক নারী বিকালে ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে গিয়ে মরদেহের টুকরো দেখতে পায়।