সারা বাংলা

গোপালগঞ্জের তিন সড়ক এখন মরণফাঁদ

গোপালগঞ্জে বছরের পর বছর সংষ্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়ক। গোপালগঞ্জ পৌরসভার বিসিক ব্রিজ থেকে গাবতলা সড়ক, কাশিয়ানী উপজেলার কালনা-ভাটিয়াপাড়া মহাসড়ক ও সদর উপজেলার বাজুনিয়া-গান্ধিয়াশুর আঞ্চলিক সড়ক যেন এখন মরণফাঁদ।

ড্রেন নির্মাণসহ নানা অজুহাতে খুঁড়ে রাখা হয়েছে এসব সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ বিসিক ব্রিজ থেকে গাবতলা পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক খোঁড়া। দুই বছর আগে ড্রেন নির্মাণের নামে সড়কটি খুঁড়ে রাখা হয়। বৃষ্টি হলেই স্থানীয়দের ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ।

দুই বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সড়কের দুই পাশে পিচ ঢালাই থাকলেও মাঝখানে ফাঁকা। বৃষ্টি হলে জমে হাঁটু পানি। একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

ওই এলাকায় বাসিন্দা মনির মোল্লা, সালাউদ্দিন খান, জাহিদ শেখসহ আরও অনেকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। হাঁটতে হলে জুতা খুলতে হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কোনো বক্তব‌্য পাওয়া যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভা মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু জানান, পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ওই সড়কের পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ড্রেন নির্মাণের কারণে সড়কটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ড্রেন ও সড়কটি ঠিক করা হবে।

এদিকে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া-কালনা সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। বালুবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা, বেনাপোল বন্দর, যশোর, খুলনা, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার যোগাযোগ হয় ভাটিয়াপাড়া-কালনা সড়ক দিয়ে। কালনা ফেরিঘাট থেকে ভাটিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রায় ৩৫টি বালুর চাতাল রয়েছে। একই সঙ্গে চলছে মুধুমতি নদীর ওপর কালনা ব্রিজের কাজ।

প্রতিনিয়ত ওই সব চাতালে ট্রাকে করে বালু ও সেতু নির্মাণের মালামাল আনা-নেওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। সড়ক বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন এর আগে কয়েকবার বালু ও ইটের খোয়া ফেলে খানাখন্দ ঠিক করে। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় ওই সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার ভেঙে দেবে গেছে। ফলে সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

খানজাহান আলী পরিবহনের চালক ওসমান বলেন, ‘রাস্তার বড় বড় গর্তের মধ্য গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।’

শংকরপাশা গ্রামের মিজানুর রহামান নামে এক ভ‌্যানচালক বলেন, ‘ভাঙা সড়কে কেউ ভ্যানে উঠতে চায় না। আমাদের আয় কমে গেছে শুধু এই সড়কের কারণে।’

কাশিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ‘এখানে প্রায় ৩৫টি বালুর চাতাল রয়েছে। এসব চাতাল মালিকরা ইজারা নিয়ে বালু কেটে এখানে রাখেন। পরে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। এখানে বড় বড় ট্রাক ঢোকার কারণে রাস্তা ভেঙে দেবে গেছে। এর সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সড়কের পাশে বালু ব্যবসার কারণে প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক ভেঙে দেবে গেছে। তবে যে অংশটুকু দেবে গেছে সেখানে ইট ও বালু ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

অন্যদিকে, বছরের পর বছর সংষ্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাজুনিয়া-গান্ধিয়াশুর আঞ্চলিক সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে জনগণকে।

১৪ কিলোমিটারের এই আঞ্চলিক সড়কের পুরো অংশই ভেঙে গেছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ বেড়েছে সীমাহীন। প্রতিনিয়ত ‍দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে চলচলকারীরা। গোপালগঞ্জের সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটারের এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে যানবাহন চলালের জন্য সড়কটি খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই সড়কে সংস্কার কাজ খুব একটা হয়নি।

স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটির অবস্থা বেহাল। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে ভোগান্তি কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, জেলার গান্ধিয়াশুর-বাজুনিয়া সড়কসহ সবক’টি সড়ক পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে সওজ গোপালগঞ্জ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্বাবধায়কসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। দ্রুত সড়কের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।