সারা বাংলা

অস্বাভাবিক ওজন নিয়ে বিপদে মাসুদ

মাসুদ রানার বয়স এখন ২৮ বছর।  স্নাতক পাস করেও পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে আছেন।  দেহের অস্বাভাবিক ওজন নিয়ে বিপদে রয়েছেন তিনি। 

বয়স যতো বাড়ছে, ততই ভয়ও বেড়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের।  ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এই মানুষটি ১৪৮ কেজি ওজনের দেহ নিয়ে হাঁটাচলাও করতেও হিমসিম খাচ্ছেন।  দরিদ্র পরিবারের শিক্ষিত এই যুবক এখন অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। 

মাসুদ রানার বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের কেরামতপাড়া গ্রামে।  তিনি ওই এলাকার কৃষক আইনুল হকের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, অস্বাভাবিক দেহ আর নানান প্রতিকূলতা পেরিয়েও মাসুদ রানা স্নাতক পাশ করেছেন।  কিন্তু কোথাও যোগ্যতার প্রয়োগ করতে পারছেন না। কয়েকবার চাকরির ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করলেও শরীর অতিরিক্ত মোটা দেখে তাকে আর কেউ কাজে নেয়নি। 

পরিবারের লোকজন জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মাসুদ রানার ওজন ছিলো ৬২ কেজি।  যতই বয়স বেড়েছে ততই তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।  ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে কোনও চিকিৎসাই কাজে আসেনি।

তারা আরও জানান, কৃষি কাজ করেই চলে তাদের পরিবার।  বয়সের ভারে বাবা আইনুল হকও ধীরে ধীরে কাজের শক্তি হারাচ্ছেন।  অথচ মোটা দেহের কারণে মাসুদ রানা কোনও কাজেই বাবাকে সাহায্য করতে পারছেন না।

মাসুদ রানা জানান, পঞ্চম শ্রেণি থেকে তার শরীরের ওজন বাড়তে থাকে।  তবে তার পরিবার সে সময় ভেবেছিল এমনিতেই ওজন কমে যাবে।  ৮ম শ্রেণিতে তার শরীর অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন তিনি চিকিৎসা নিতে শুরু করেন।  কিন্তু কাজ হয়নি।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, এমনকি ক্লাসেও তাকে স্থুলকায় শরীরের জন্য বিব্রত হতে হয়েছে।  এখনো তাকে অনেক স্থানেই বিব্রত হতে হচ্ছে। 

মাসুদ রানা জানান, যে বেঞ্চে সে বসতো সেখানে কোনও বন্ধুই তার পাশে বসেনি।  সেজন্য স্কুলে মাঠের একপাশে বসে থাকলেও সেখানেও মিলতো সহপাঠীদের ঠাট্টা বিদ্রুপ।  ১০৯ কেজি ওজন নিয়ে এভাবেই ২০০৮ সালে সেকেন্ডারি পাশের পর পড়ালেখাতে মন বসেনি।  মাঝখানে দুই বছর পড়াশুনা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন।  এ সময় হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. লায়েক আলী খানের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়েছিলেন বেশ কিছু দিন।  তবে চিকিৎসায় তার শরীরের ওজন কমেনি।  তবুও প্রবল ইচ্ছা নিয়ে আবারও পড়াশুনা শুরু করেন।  পরে ২০১২ সালে বোদা পাথরাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।  তখন তার শরীরের ওজন ১২৮ কেজি।  ২০১৮ সালে এই অস্বাভাবিক দেহ নিয়েই স্নাতক পাশ করেন তিনি।

মাসুদ রানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একদিকে আমার পরিবার আমাকে নিয়ে কষ্টে আছে, অপরদিকে চিকিৎসাতেও কাজ হচ্ছে না।  কিন্তু ডাক্তারদের কাছ থেকে আমি শুনেছি বিদেশে এর চিকিৎসা আছে।  তবে আমার পরিবারের সামর্থ্য নেই বিদেশে চিকিৎসা করানোর।

তিনি বলেন, হৃদরোগ ও হরমোন বিশেষজ্ঞদের কাছে রংপুরে এবং ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছি।  হাঁটাচলা শুরু করলেই হাঁটুতে অতিরিক্ত ব্যথা হয়।  এজন্য হাঁটতেও পারছি না।  আমার পোশাক পাওয়া যায় না।  কোন সুন্দর পোশাক পড়তে পারি না শরীরের কারণে।  ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকরিতে আবেদনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি।  এখন আমি পরিবারের বোঝা হয়ে উঠেছি।  স্নাতক পাস করেও আমি অসহায়।