সারা বাংলা

সিডরে বিধ্বস্ত শরণখোলার চাওয়া দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলায় আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন সিডর। ব্যাপক জান-মালের ক্ষতি হয়েছিল। সরকারি হিসেবে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯০৮ জন। 

সিডরের পরে বিধ্বস্ত শরণখোলায় বহুমুখী উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র দাবি ছিল বলেশ্বর নদীর পাশ ঘিরে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধের ৬০ কিলোমিটার নির্মাণ শেষ হয়েছে।  কিন্তু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা থেকে সাউথখালী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাঁধ এখনও নির্মাণ শেষ হয়নি। এই দুই কিলোমিটার এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে এখানে বাসিন্দাদের জন্য। 

প্রতিবছরই একাধিকবার এই দুই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। এই দুই কিলোমিটার দিয়ে যাতে লোকালয়ে পানি না ঢুকতে পারে সে জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যত দ্রুত সম্ভব নদী শাসন করে ক্ষতিগ্রস্ত দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

উত্তর সাউথখালী এলাকার মিজানুর রহমান, মোঃ ইউনুস, সগির মোল্লাসহ কয়েকজন জানালেন, সিডরে তার আপনজন, ঘর-বাড়ি, জমি-জমা হারিয়েছেন। সিডরের পরও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কবলে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের একটাই দাবি ছিল, বলেশ্বর নদী সংলগ্ন এলাকা বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। 

তারা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া রিং বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রত্যেক বছরই একাধিকবার প্লাবিত হতে হচ্ছে তাদের। 

সিডরে বাবা-মাসহ পরিবারের সাত সদস্য হারানো আল আমিন খান বলেন, ভয়ঙ্কর সিডরে বাবা-মা, বোন, ভাগ্নিসহ পরিবারের সাত সদস্যকে হারাই। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। সব হারিয়েও একটা মাত্র আসা করেছিলাম, টেকসই বেড়িবাঁধ হলে বাবার যেটুকু জমি-জমা আছে তাই নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকব। কিন্তু সিডরের পরেও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এলাকার অনেকেই জমি হারিয়েছে বলেশ্বরের ভাঙনে। আমরা ত্রাণ চাইনা, আমাদের এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডর বিধ্বস্ত মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার ব্যাপক কাজ করেছে। বেড়িবাঁধের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু নদী শাসন না করার কারণে মাত্র দুই কিলোমিটার জায়গায় এখনও টেকসই বাঁধ নির্মান হয়নি। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে নদী শাসন করে ওই দুই কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। নদী শাসনের কোন বিকল্প নেই।

সিইআইপি প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, করোনাকালীন সময় আমাদের কাজ কিছুটা থেমে গিয়েছিল। পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আশা করি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নদী শাসনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, সিডরের পর এই এলাকার মানুষের আর্থ সামাজিক ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।  ওই এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে। যা খুব শিগগিরই শেষ হবে। নদী শাসনের বিষয়টি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যাবে। 

অনুমোদন পেলেই নদী শাসনের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।