সারা বাংলা

পরিযায়ী পাখি শিকারে অভিনব কৌশল ‘বাঁশির সুর’

খুলনায় আইনের তোয়াক্কা না করে অর্থের লোভে অভিনব কৌশলে অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছে পাখি শিকারিরা। পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে শিকারিরা কাজে লাগাচ্ছে এক ধরণের ‘বাঁশির সুর’।

শিকারের পর আকারভেদে এসব পাখি ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করছে তারা। এক শ্রেণির শৌখিন মানুষ এসব পাখি কিনে নিচ্ছেন।

সূত্র মতে, খুলনা অঞ্চলের জলাশয়গুলোতে আসতে শুরু করেছে পাখির। অন্যান্য বছরের মতো এবারও হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে সুন্দরবন সংলগ্ন-এ অঞ্চলে। এর মধ্যে খুলনার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয় হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালি হাঁস, বক, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তেচাড়া, পাতাড়ি হাঁস, পানকৌড়ি, কাদাখোঁচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া অন্যতম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক শিকারি রাতের বেলা অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। এসব শিকারি রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধানখেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। এছাড়া, শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে ও কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারি। শিকারিরা এক রাতেই নিধন করে কয়েকশ অতিথি পাখি।

পাখি ধরার অভিনব সুরের বাশি

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, খুলনা জেলায় সবচেয়ে বেশি পাখি শিকার হয় তেরখাদা ও ডুমুরিয়া উপজেলায়। তেরখাদা উপজেলায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধ ভুতিয়ার বিল এলাকার নাচুনিয়া, ইন্দুহাটি, পাখিমারা, নৌকাডুবি, আড়কান্দি, আউরোবুন্নি, বাসুখালী বিল ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, মাগুরখালী, শিবনগর, কাঠালিয়া, ঘুরুনিয়া, লাঙ্গলমোড়া, বগারখোর, কুলটি, জালেরডাঙ্গা, ভেল্কামারী, খড়িয়া, পশ্চিম বিলপাবলা, গগনা খাল, বাইসরাণী, রংপুর, বিল ডাকাতিয়া, মির্জাপুর, শোভনা ও মাগুরাঘোনা এলাকাসহ উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে শিকারিরা রাতের বেলা পাখি নিধনে নেমে যায়।

পাখি শিকারে পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে বাঁশি তৈরির অভিনব এ কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের একজন শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তালপাতার সঙ্গে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিকের কভারের এক মাথায় সুপারগুলু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে তৈরি করা হয় অভিনব এই বাঁশি।

সরেজমিনে ডুমুরিয়া ও চালনা বাজারের সুতা ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দোকানগুলোতে অসাধু শিকারিদের ওই বাঁশি তৈরির জন্য দোকানিদের কাছ থেকে এসব সরঞ্জাম কিনছে দেখা গেছে।

বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল কবির জানান, অতিথি পাখি নিধনের বিষয় জানা নেই। তবে যদি কেউ শিকার করে থাকে সেক্ষেত্রে সে অপরাধ করছে।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান জানান, শিকারিরা একদিকে পাখি শিকার করে অপরাধ করছে, অন্যদিকে রাতের আঁধারে খেতের ধানও নষ্ট করছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জীব দাশ জানান, পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। অতিথি পাখি শিকারের বিষয়ে শোনা যায়, কিন্তু হাতেনাতে শিকারিদের ধরা যায় না। তবে সঠিত তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শীতপ্রধান দেশগুলোতে তীব্র শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের জন্য অতিমাত্রায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। একদিকে তুষারপাত অন্যদিকে খাদ্য সংকটের কারণে পাখিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। তখন বাঁচার তাগিদে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত কম শীতের এই বাংলাদেশকে সাময়িক আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয় এসব পাখি। শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়।