সারা বাংলা

ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ

চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি উপজেলার সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করে চলছে জমজমাট কাঠ পাচার।

স্থানীয় বন বিভাগের রেঞ্জ ও বিট অফিস সমূহকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে শত শত গাড়ি বোঝাই করে কাঠ যাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে।

আর প্রকাশ্যে দিবালোকে পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি হচ্ছে ভাটাগুলোতে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একাধিক অভিযানে চোরাই কাঠবাহী গাড়ি আটক করা হলে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ভূমিকা অনেকটা নির্বিকার।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় বন ও পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে, লোকালয়ে, কৃষি জমিতে, আবার পাহাড় ও বন অঞ্চলের পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক ইটভাটা। বর্তমানে মৌসুম শুরু হওয়ার পর এসব ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে চলছে ইট তৈরির মহাযজ্ঞ। ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় বন বিভাগকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে নির্বিঘ্নে শত শত মিনি ট্রাক, চাঁদের গাড়ি, টমটম, জিপযোগে ইটভাটাসমূহে কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাটহাজারী ফরেস্ট রেঞ্জ এবং ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ন হাট রেঞ্জ-এর বন ভুমি উজাড় করেই ইটভাটাগুলোতে কাঠ পাচার হচ্ছে।

হাটহাজারীতে অবৈধভাবে কাঠ পাচার হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন জানান, গত সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালিয়ে আমরা তিনটি জিপগাড়ি ভর্তি বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠ উদ্ধার করেছি। মূলত উপজেলার কাটির হাট, সরকার হাট, ফতেয়াবাদ এলাকার বন এলাকা থেকে এসব কাট কেটে পাচার করা হচ্ছিল। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবেন বলে জানান ইউএনও।

এদিকে, উপজেলার হাটহাজারী রেঞ্জের শোভনছড়িসহ বেশকিছু এলাকার সংরক্ষিত বনের কাঠ কেটে পাচার করা হচ্ছে সুয়াবিলসহ ফটিকছড়ির বিভিন্ন ইটভাটায়। ইটভাটা মালিক সমিতি কর্তৃক বন বিভাগকে বড় অংকের অর্থ ম্যানেজ করে ইটভাটায় কাঠ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। একইভাবে কাঠ পাচার চলছে নারায়ন হাট রেঞ্জের বন অঞ্চলগুলো।

এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ইটভাটায় কাঠ পাচারের সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। স্থানীয় বিট অফিসগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। ইটভাটায় কাঠ পাচার প্রতিরোধে হাটহাজারী রেঞ্জ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানান। 

ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বনাঞ্চলের পাশে গড়ে উঠা ৩টি ইটভাটা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়মিত অভিযানে ভাটা মালিকদের লাখ লাখ টাকা জরিমানাও করা হচ্ছে। চলমান এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান নুরুল্লাহ নুরী।