সারা বাংলা

‘ও কাকা, একটা কাঠি নেন, বাবুর নজর লাগবে না’

‘ও কাকা,  একটা কিছু নেন না, ও দাদা, একটা নজর কাঠি নেন না।’ 

পেছন থেকে এক বৃদ্ধা দশ টাকা পকেট থেকে বের করে দিতে চাইলে ছোট ছেলেটি বলে উঠলো, ‘টাকা নিমু না দাদা। আপনাগর বাড়িতে ছোট বাবু আছে না, একটা নজর কাঠি নিলে বাবুদের নজর লাগবে না। বাবুদের হাতের বালাও আছে, একটা নেন না দাদা।’ এভাবেই মহান বিজয় দিবসে ফেরি করে কিছু জিনিস বিক্রি করছিল দশ বছর ছুঁই ছুঁই এক বালক।

নাম তার রাব্বি। তার বাবা নেই। মারা গেছে তার জন্মেরও আগে। বাবার নামও মনে নেই তার। তাই বাবার আদর বা সোহাগ কেমন, তা জানে না রাব্বি। মার নাম জানতে চাইলে জানালো, শাকিলা বেওয়া। অভাবের তাড়নায় গ্রামে-গঞ্জে মাকে নিয়ে এভাবেই ঘুরে বেড়াতে হয় রাব্বিকে। তবে রাব্বির বাড়ি নাটোর জেলায় কোনো এক পাড়া গাঁয়ে।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) নওগাঁর ধামইরহাটে বিজয় দিবসে উপজেলা চত্বরে ভ্রাম‌্যমাণ এক দোকান নিয়ে ঘুরছিলো রাব্বি। তার দোকানে জিনিসপত্র বলতে তেমন কিছুই নেই। যা আছে, তা আর এখন মানুষ তেমন কেনেন না। তাই এসব পণ‌্য বিক্রি করতে রাব্বিকে বেশ বেগ পেতে হয়।

এদিকে, কনকনে শীতেও রাব্বির গায়ে তেমন কোনো শীতবস্ত্র নেই। চোখ-মুখও মলিন। ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গেছে। দেখে মনে হয় অনাহারে রয়েছে।

এই বয়সে লেখাপড়া না করে ফেরি করছে কেন জানতে চাইলে রাব্বি বলে, ‘লেখাপড়া করলে আমাকে খেতে দিবে কে? আমাদের দেখার তো কেউ নেই। আমার আব্বা জন্মের আগেই মারা গেছে। মা ভিক্ষা করা পছন্দ করে না। তাই কাজ করে খাচ্ছি। আপনি চাইলে কিছু কিনে আমাকে সাহায‌্য করতে পারেন।’

রাব্বি আরও বলে, ‘আমার দোকানে বাচ্চাদের নজর না লাগে এমন নজর কাঠি আছে। এর দাম ৫০ টাকা। এছাড়া, বাচ্চাদের ঝুনঝুনি ৩০, বাত-ব্যথা ভালো হওয়ার মালা ৪০ টাকা ও ব‌্যাথানাশক তেল ৭০ টাকা। এসব  বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। তার পরেও ছোট মানুষ আমি, কাজ করে খাই। ভিক্ষা করি না।’