সারা বাংলা

কৃষাণী জুলেখার জীবন-সংগ্রাম 

জুলেখা বেগম। একজন জীবন-সংগ্রামী নারী। এখন তার ঠিকানা মাগুরার সদর উপজেলার পুখরিয়া গ্রামে। স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আবাস গেড়েছেন তিনি।  

জুলেখা বেগমের অল্প বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ভেল্লাকান্দি গ্রামের নওয়াব আলীর সঙ্গে। কিন্তু সুখ তার কপালে বেশি দিন সয়নি। তিন সন্তানের জন্মের পর স্বামী নিরুদ্দেশ হলে ফিরে আসেন বাবার সংসারে। এরপর থেকে সব ভার একাই বইছেন তিনি।

সম্প্রতি পুখরিয়া গ্রামের মাঠে ফসলের ক্ষেতে সার ছিটাতে দেখা যায় জুলেখাকে। সার ছিটানো দেখে মনে হয় তিনি কৃষিকাজে দক্ষ। পরে জানা যায়, তিনি শুধু সার ছিটানো নয়, জমিতে লাঙল দেওয়া, পাওয়ার টিলার চালানো, কোদাল দিয়ে জমি কোঁপানো, এমনকি মাথায় করে ধান-পাটের বোঝা বহনেও পারদর্শী। 

পুখরিয়া গ্রামের সুরুজ মোল্লার মোটামুটি সচ্ছল সংসারে জন্ম জুলেখা বেগমের। তিন বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে তিনি সবার বড়। ছোটবেলা থেকে বাবাকে টুকটাক কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে সংসারের ভার এসে পড়ে জুলেখার কাঁধে। বাবার সংসারের হাল ধরেন তিনি। এক সময় বিয়ে হয় তার। কিন্তু পরিত্রাণ মেলেনি। 

দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে হঠাৎ করে স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে জুলেখার। উপয়ান্তর না পেয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি। ভাই-বোন, তিন সন্তান আর বাবা-মার দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় জুলেখার সংগ্রাম।

জুলেখা বাবার পাঁচ বিঘা ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। জমিতে ধান, পাট, সবজি ফলান। মাঠে অন্যদের থেকে তার ক্ষেতে ফলন ভালো হয়। গবাদিপশু পালনের পাশাপাশি ক্ষেতখামারের যাবতীয় কাজ করেন নিজের হাতে। কখন কোন ফসল আবাদ করতে হবে, কখন কোন সার, কীটনাষক কী পরিমাণে দিতে হবে- সব জানা জুলেখার।  

জুলেখা বেগম বলেন, এ বছর তিনি ৫০ মণ ধান, ২০ মণ পাট পেয়েছেন। সবজি ও গরু-ছাগল বিক্রি করে এক লাখ টাকারও বেশি আয় করেছেন।  

জুলেখা বলেন, তার স্বামী প্রায় ২১ বছর ধরে নিখোঁজ। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে আজও জানতে পারেননি। কৃষিকাজে প্রথম দিকে তার অনেক সমস্যা হতো। তাকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে উল্টো নানা কথা শোনাতো লোকে। কিন্তু তিনি কারও কটু কথা কান দেননি বলেই আজ সফল হতে পেরেছেন। 

জুলেখা নিজে বেশি লেখাপড়া না শিখতে পারলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করছেন। দুই ছেলে সিরাজ ও মিরাজ রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্সে পড়ছে। বড় মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে দিয়েছেন। জুলেখা ভাইদের বিয়ে দিয়ে সংসার গড়ে দিয়েছেন।

পুখরিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জুলেখার সংগ্রামী-জীবন অনেকের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। গ্রামের মেয়ে হিসেবে জুলেখার জন্য তিনি গর্ববোধ করেন।