সারা বাংলা

ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধের আভাস চালনা পৌরসভায়

আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

মেয়র পদে চারজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সনত কুমার বিশ্বাস, বিএনপি’র মো. আবুল খয়ের খাঁন ও স্বতন্ত্র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের মধ্যেই এ ভোটযুদ্ধ হতে পারে।

সে ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হতে পারে- এমনটাই ধারণা করছেন ভোটাররা। তবে, অপর সতন্ত্র প্রার্থী গৌতম কুমার রায়ের নাম তেমন আলোচনায় নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে বিএনপি নেতা মো. আবুল খয়ের খান পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে সাবেক মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন বর্তমান মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস। সেবার এই তিন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এর উল্টো হয়। সনত বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হন এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শেখ আব্দুল মান্নান তৃতীয় হন। ওই নির্বাচনে অচিন্ত্য মণ্ডল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।

চালনা পৌরসভায় এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ১শ’ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৮৬৩ ও নারী ৬ হাজার ২৩৭ জন ভোটার রয়েছে। এখানে সাধারণ ৯টি আসনে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত ৩টি আসনের বিপরীতে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। এবার এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে।

সূত্র মতে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়। সেখান থেকে এর একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি ননীগোপাল মণ্ডল ও অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডলের অনুসারী। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আলী খানের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শেখ আবুল হোসেন। সেবারের নির্বাচনে মুনসুর আলী খান ছিলেন ননীগোপাল মণ্ডলের সমর্থনপুষ্ট।

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, তিনজনই হেভিওয়েট প্রার্থী। এবার দলীয় প্রতীক থাকায় ত্রিমুখী লড়াই জমবে।

একই এলাকার ভোটার মো. আবদুর রহিম জানান, সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে। কারণ, এই তিন ব্যক্তিই মেয়রের চেয়ারে বসেছেন।

বৌমার গাছতলা এলাকার ভোটার লতিফা বেগম বলেন, তিন প্রার্থীই দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছেন। উড়ে এসে কেউ প্রার্থী হননি।

অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। তবে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সর্মথকরা প্রভাব খাটিয়ে আমার কর্মী-সর্মথকদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। এমন কি হুমকি ও নির্বাচনের মাঠ থেকে তাড়িয়ে বের করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস বলেন, দলের বিদ্রোহী একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজ করছে। নির্বাচনের পরিবেশ অনেকটা ভাল।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানান, পরাজয় নিশ্চিত বুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমন নানা অভিযোগ করে থাকতে পারেন। তবে জয়ের ব্যাপারে সনত বিশ্বাস শতভাগ আশাবাদী।

বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁনের নির্বাচনী এজেন্ট মোজাফ্ফর হোসেন জানান, নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময় প্রচার-প্রচারণায় বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, বিএনপি সেটা প্রত্যাশা করে।

এদিকে, প্রথমবারের মতো পৌরমেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন গৌতম কুমার রায়। তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় একাই প্রচারণার কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে দুই একজন কর্মী-ভক্ত নিয়ে মাঠে নামছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এবারের পৌর নির্বাচনে সাবেক সাংসদ ননীগোপাল মণ্ডল কোনো প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করছেন না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানও প্রত্যক্ষভাবে কোনো প্রার্থীর জন্য মাঠে নামেনি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন নৌকা প্রতীকের জন্য ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহামুদ হোসেন জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার বিষয়ে ভোটারদের হাতে-কলমে শিখানো হবে।