সারা বাংলা

সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট ২য় দিনে, দুর্ভোগ চরমে

সিলেটের সব পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে ‘সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের’ ডাকা ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগ। যানবাহন না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর)  দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করছেন সিলেট বিভাগের ৪ জেলার পরিবহন শ্রমিকরা। এ কারণে আজও দূরপাল্লার যানবাহন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যথা নিয়মে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েও গেছে।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল ও তেলিবাজার, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বাগেরসড়ক, দরবস্ত, সারিঘাটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও রাস্তায় পিকেটিং করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট ছোট  যানবাহন থেকেও যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দেখা যায় শ্রমিকদের।

সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কর্মস্থলগামী মানুষ। ধর্মঘটের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া কেউই বের হচ্ছেন না। বন্ধ দেখা গেছে অনেক শপিংমল, বিপণিবিতান। আর যারা বের হচ্ছেন, তারা পায়ে হেঁটে কিংবা অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা করে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিংয়ের রাইডার এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোটর সাইকেল চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজারে কথা হয় সিলেটের ব্যবসায়ী জুবায়ের মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে বের হয়েও কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। একটি টমটমে উঠেছিলেন; কিন্তু পথে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। জনসাধারণকে জিম্মি করে এই ধর্মঘট অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার থেকে সিলেট শহরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এ পথ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে পাড়ি দিয়েছেন ট্রাভেলস ব্যবসায়ী সুলাইমান মাহমুদ। তিনি বলেন, গাড়ি না পাওয়ায় তিনি হরিপুর বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে সিলেট শহরে পৌঁছান। এ কারণে তাকে বাড়তি খরচও করতে হয়েছে। মূলত অফিসের জরুরি কাজ থাকায় তিনি বাড়তি খরচ করেও শহরে পৌঁছেছেন, না হলে আজ বাড়ি থেকে বের হতেনই না।

সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের বৈঠকে আমাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরেছি। পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন নয়, শ্রমিকদের মাধ্যমে আমরা পাথর উত্তোলন করতে চাই- জানালেও বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের মতামত বা দাবিকে গুরুত্ব দেননি। তাই আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলছে। টানা তিন দিন পুরো সিলেট বিভাগে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী, সংবাদপত্র ও জরুরি ওষুধ বহনকারী গাড়িসহ জরুরিসেবার যানবাহন চলাচলে বাধা নেই। দাবি আদায়ে পরে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ধর্মঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে টহলও। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস) বি এম আশরাফুল্লাহ তাহের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, সিলেট নগরীসহ মেট্রোপলিটন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। প্রথম দিন থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এ পর্যন্ত ধর্মঘটে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।