সারা বাংলা

‘১০ বছরেও মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১০তম বার্ষিকী আজ।

কিশোরী ফেলানী ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় নির্মম হত্যার শিকার হন। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটা তারে ঝুলে থাকে তার মরদেহ। 

এনিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। বিএসএফ এর বিশেষ আদালতে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস পান অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। এ রায়কে প্রত্যাখান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এরপর কয়েক দফা ফেলানী হত্যার বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিচারকার্য এখনও অমীমাংসিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যার বিচার পুনরায় শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই আবার ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানী শুরু হয়। পরের দুই বছর কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানী দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির তারিখ ধার্য্য হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি। এ অবস্থায় মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর পরিবার ও এলাকাবাসী।

ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম জানান, আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি। মেয়ে আমার চলে যাওয়ার ১০ বছর হলো, আজও তার বিচার পেলাম না। বার বার বিচারের তারিখ বদলায়। তাহলে বিচার পাব কীভাবে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনার পূর্বে শুনানির তারিখ থাকলেও তা হয়নি। এখন আর কোন খোঁজ খবর জানিনা।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, ফেলানী হত্যার এতো বছর হয়ে গেছে আজও  বিচার পাইলাম না। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেমন রয়েছে তেমনি বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতও এর সুষ্ঠু বিচার আশা করে। ফেলানী হত্যার বিচার প্রথমত: ভারতই শুরু করে। কিন্তু বিএসএফ সঠিক সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় সুপ্রিমকোর্টে বিচারটি গড়ায়। ফলে সেখান থেকেই রায়টি আসবে।

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক দফা শুনানির তারিখ পিছিয়ে গেছে। বর্তমান কোভিট-১৯ এর জন্য সেখানে ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। যদি ভার্চুয়ালিও বিচারের শুনানি হয় তাহলে দ্রুত এর নিষ্পত্তি হতে পারে। অন্যথা পরিস্থিতি ভালো হলে রিটটির শুনানি হবে। আশা করছি ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পাবে।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। মেয়ের বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে। ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের উপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর। লাশ ঝুলে থাকে কাঁটাতারে।