সারা বাংলা

ছিন্নমূলের ভরসা ফুটপাত

বাড়ছে শীত। শীত থেকে বাঁচতে ফুটপাতে ভিড় করছেন লক্ষ্মীপুরের হতদরিদ্র মানুষগুলো।  সকাল-সন্ধ্যা ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে এসব দোকান। বিক্রেতারাও কম মূল্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন সেখানে।  সাধ ও সাধ্যের মধ্যে শীতের পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।

দালাল বাজার, রায়পুর, রামগঞ্জ ও সদরের তমিজ মার্কেট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে শীতের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও ভিড় করছেন সেখানে।  ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কম মূল্যে কিনছেন পছন্দের পোশাক। জমজমাট হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানিদের বেচাকেনা।  এখানকার বেশিরভাগ ক্রেতা হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তবে মধ্যবিত্তদেরও দেখা যায় মাঝে মাঝে।

এ বছর শিশু ও বয়স্কদের শীতের কাপড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দোকানগুলোতে মানভেদে একেকটি সোয়েটার ১০০ থেকে ৩০০, জ্যাকেট ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০, প্যান্ট ৯০ থেকে ২৫০, গেঞ্জি ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে শীতের পোশাক বিক্রিতে পিছিয়ে নেই জেলার অভিজাত শপিং মলগুলো। বিপণিগুলোতে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধদের বাহারি রঙ আর আধুনিক ডিজাইনের শীতের পোশাক তোলা হয়েছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা সাধ্যের মধ্যে সেখান থেকে ক্রয় করছেন পছন্দের পোশাক। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় বিক্রেতারাও খুশি।

সদরের দালাল বাজার এলাকায় শীতের পোশাকের ভ্রাম্যমাণ দোকানের সামনে অটোরিকশা চালক আলম মিয়ার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। মাঝে মধ্যে না খেয়েও থাকেন। তবুও ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে কিনতে হবে শীতের পোশাক।  কারণ, শীত আর সন্তানরা বুঝবে না, টাকা যে নেই। আবার বড় বড় মার্কেটগুলোতে দোকানিরা ডাকাতি (দাম বেশি) করে। এজন্য রাস্তার পাশের দোকান থেকে শীতের জামা কিনেছি।

গৃহিনী আছমা আক্তার বলেন, ঠান্ডা পড়ায় শীতের পোশাক কিনছে এসেছি।  ফুটপাতের এসব দোকানে সাধ্যের মধ্যে অনেক ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। এজন্য তিন সন্তান ও বৃদ্ধা শাশুড়ির জন্য কিনেছেন শীতের পোশাক। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি।

বছরজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাব থাকায় গরম কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি। এজন্য বিক্রিও করছেন গত বছরের চেয়ে বেশি দামে। বিক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, সামনে আরও দাম বাড়ার। কারণ, শীত বাড়ার সঙ্গে শীতের পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।  

প্রতি বছর শীত এলেই লক্ষ্মীপুর তমিজ মার্কেট এলাকায় রাস্তার ধারে গরম জামা বিক্রি করেন মো. সোহেল। এবারের বেচাবিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করতে হয়েছে শীত পোশাকের বান্ডেল। আবার বান্ডেলে অধিকাংশ গরম জামা ছিঁড়া। যা বিক্রি করা যায় না। এছাড়া কর্মচারীর বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচ বেশি। তাই বিক্রি করছেন বেশি দামে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি সোয়েটারের বান্ডেল ১৫ থেকে ১৮, জ্যাকেট ১৪ থেকে ১৭, প্যান্ট (টাউজার) ১১ থেকে ১৪, কটি ১৮ থেকে ২০ ও গেঞ্জি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় ক্রয় করছেন।  প্রত্যেকটি বান্ডেলে ১০০ থেকে ২০০ পিচ জামা থাকে।

শপিংমল থেকে অনেকটা কম দামে শীতের পোশাক পাওয়া যায় ফুটপাতে। পোশাকগুলোর মানও খুব খারাপ না। এজন্য নিম্নআয়ের মানুষগুলো ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে শীতের জামা ক্রয় করে পরিধান করে থাকেন। এখানকার দোকানগুলোই হতদরিদ্রদের জন্য অভিজাত শপিংমল।