সারা বাংলা

নরসিংদীতে স্বেচ্ছাশ্রমে ৪০০ ফুট দীর্ঘ সেতু

নরসিংদীতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো ৪শত ফুট দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু। আর এ সেতুটি নির্মিত হয় রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের মাছিমনগর ও চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের সংযোগস্থলে মেঘনার শাখা নদীর ওপর।

সেতুটি স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজস্ব অর্থায়নে বটতলী গ্রামবাসী নির্মাণ করলো দৃষ্টিনন্দন এ ৪শত ফুট দীর্ঘ কাঠের সেতুটি। সেতু নির্মাণে গ্রামবাসী মধ্যে কেউ দিয়েছেন অর্থ, আবার কেউ দিয়েছেন শ্রম। সব মিলে মাত্র দুই মাসে সেতুটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন স্থানীয়রা। সেতুটি নির্মাণের ফলে চরআড়ালিয়া ও আমিরগঞ্জসহ পাঁচ-ছয়টি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের পথ সুগম হয়েছে। 

সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকা। সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস। সেতুটির প্রস্ত সাড়ে ৬ ফুট। গত ১০ জানুয়ারি এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় সেতুটি। সেদিন সেখানে জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ। গ্রামবাসীদের মধ্যে ছিল আনন্দ উল্লাস।

এখন সেতুটি একনজর দেখতে প্রতিদিন আশপাশের লোকজন ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের দাবি এ সেতুটির স্থানে যেন একটি পাকা সেতু নির্মিত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এই সেতুর স্থানটি দিয়ে চরআড়ালিয়া, নিলা, আমিরগঞ্জ, হাইরমারা, চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নসহ পাঁচ-সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার লোকজন চলাচল করে। সাপ্তাহিক সোমবার, বৃহস্পতিবার মনিপুরা হাট ও শুক্রবার বাজার হাসনাবাদে উল্লেখিত ইউনিয়নগুলোর মানুষের কয়েক যুগ ধরে কষ্টে চলাচল করতে হচ্ছিল। সেতুটি নির্মাণের ফলে তাদের দুর্ভোগ কমেছে। 

বটতলী গ্রামের অটোরিকশা চালক সাহাবুদ্দিন বলেন, বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, বয়স্ক মহিলা ও রোগীদের সমস্যা হতো। এই কাঠের সেতু নির্মাণ হওয়ায় এখন অটোরিকশা নিয়ে এপার থেকে ওপারে যেতে পারছেন। 

একই গ্রামের মাস্টার আলী বলেন, ‘এলাকাবাসী মিলে দীর্ঘ দুই মাস পরিশ্রম করে এই সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।’ 

চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এটি অবহেলিত ইউনিয়ন। আমাদের গ্রাম থেকে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে দক্ষিণ মির্জানগর গার্লস স্কুল,মাদ্রাসা, হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে যায়। তাছাড়াও গর্ভবতী মহিলাসহ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। এই কষ্ট কিছুটা লাঘবের জন্য আমরা নিজস্ব অর্থায়নে কাঠের সেতু নির্মাণ করেছি।’ 

আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন খাঁন বলেন, ‘যাদের অকান্ত পরিশ্রমে এখানে কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’ 

চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের হাসানুজ্জামান সরকার হাসান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এক ফুট রাস্তাও পাকা নেই। বটতলী গ্রামে নদীর ওপর কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে শুধু এলাকাবাসীর দেওয়া টাকায়। আমার কাছ থেকেও একটা টাকাও নেয়নি তারা। এলাকাবাসীর কঠোর পরিশ্রমে সেতু নির্মাণের ফলে আশপাশের পাঁচ-ছয়টি ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি হলো।’ 

রায়পুরা উপজেলা প্রকৌশলী শামীম ইকবাল মুন্না বলেন, ওই এলাকায় মেঘনা শাখার ওপর ১০০ মিটারের একটি সেতুর প্রস্তাব রয়েছে। শিগিগরই এলজিইডির অর্থায়নে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।