সারা বাংলা

জেএম সেন ভবনে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ 

চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্য জেএম (যাত্রামোহন) সেন ভবন দখলমুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ভূমিকায় এখানে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, জেএম সেন ভবন দখলমুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রাথমিক বিজয় উদযাপনে আগামী ২৯ জানুয়ারি আনন্দ মিছিল করবে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ।

সংবাদ সম্মেলনে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘আমরা চাইবো, জাদুঘরে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিশেষভাবে থাকুক। এ পর্বটি আমাদের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত চট্টগ্রামের অবদান সর্বভারতে স্বীকৃত। কিন্তু সেটার নিদর্শন চট্টগ্রাম সেভাবে রাখেনি। আপাতত বিপ্লবীদের এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের ছবি, বই, দলিল, যা পাওয়া যায় তা প্রদর্শন করা হবে।’

তিনি বলেন, জাদুঘরের জন্য প্রকল্প তৈরি করতে হবে। বাজেট করতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিতে হবে। বহুতল ভবন তৈরি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক আলিউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, কর্ণফুলী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, আবৃত্তিকার রাশেদ মাহমুদ, শ্যামল কুমার পালিত, ড. জিনবোধি ভিক্ষু প্রমুখ।

গত ২৩ জানুয়ারি নগরের বাকলিয়া সার্কেলের রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত জেএম সেন ভবনে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ নির্মাণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়।

শতবর্ষের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী চট্টগ্রামের জেএম সেন ভবন। লাল ইটের তৈরি টিনের ছাউনি দেওয়া এ ভবনে সংবর্ধিত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় আটক ও পরে মুক্তি পাওয়া বিপ্লবীরা। 

এ ভবন থেকে শুরু হয় চট্টগ্রামের অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনে যোগ দেওয়া চা-শ্রমিকদের ওপর ব্রিটিশ পুলিশ গুলি চালালে সংহতি জানানো রেল শ্রমিকরা এ ভবন ও আশপাশের এলাকায় তাঁবু টানিয়ে ধর্মঘট চালিয়ে যান। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের নানা বাঁকবদলের সাক্ষী চট্টগ্রামের প্রথম টাউন হল খ্যাত যাত্রামোহন সেন (জেএম সেন) ভবন। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের হাত ধরেই চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়।

১৯১৬ সালের ১৯ নভেম্বর ভবনের নির্মাণ শুরু হয়। ১৯১৯ সালের ২ ডিসেম্বর যাত্রামোহন সেনগুপ্ত মারা যান। পরের বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এরপর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কংগ্রেস নেতা দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত হলটির নতুন নাম রাখেন ‘যাত্রামোহন সেন হল’, পরে যা ‘জেএম সেন ভবন’ নামে পরিচিতি পায়।